ঢাকা রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
বিবিসির বিশ্লেষণ

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের অনড় অবস্থানের নেপথ্যে কী

বিবিসি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের অনড় অবস্থানের নেপথ্যে কী

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

কখনো কখনো মুখে কী বলা হলো তা বড় ধরনের প্রভাব তৈরি করে না; বরং কথাটি নিয়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি ‘রাশিয়ান ফার ইস্ট’ অঞ্চলে এক সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশে একটি হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে যেন কোনো সেনা পাঠানোর কথা ভাবাও না হয়—শান্তিরক্ষী বাহিনী হলেও নয়।

পুতিন বলেন, ‘যদি সেখানে কোনো সেনা মোতায়েন করা হয়, বিশেষ করে লড়াই চলার এ সময়ে, তবে আমরা তাঁদের বৈধ নিশানা হিসেবে ধরব।’

এরপর পুতিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক শহরে অর্থনৈতিক ফোরামে উপস্থিত থাকা দর্শকেরা পুতিনের কথা শুনে হঠাৎই করতালিতে ফেটে পড়লেন। রুশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা যেন পশ্চিমা সেনাদের ‘ধ্বংস’ করে দেওয়ার ওই হুমকিকে খোলাখুলিই স্বাগত জানালেন।

কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে সহায়তা করতে আগ্রহী মিত্রদেশগুলো (কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং) যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউক্রেনের জন্য ‘শান্তিরক্ষী বাহিনী’ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এক দিন পর পুতিন ওই হুঁশিয়ারি দেন।

পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে রাজি, কিন্তু সে সাক্ষাৎ শুধু রাশিয়াতেই হতে হবে। তখন দর্শকেরা আবার হাততালি দিলেন।

পুতিন বলেন, ‘এর জন্য সেরা স্থান রাশিয়ার রাজধানী, হিরো সিটি মস্কো।’

রাশিয়ার বাইরে পুতিনের প্রস্তাবকে একেবারেই গুরুত্বহীন ও বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করা হয়েছে। একে রাজনৈতিক ট্রল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে অনেক দিক থেকে এটি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ক্রেমলিনের বর্তমান অবস্থানকে পুরোপুরি প্রকাশ করেছে।

পুতিন বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা শান্তি চাই, কিন্তু শুধু আমাদের শর্ত সাপেক্ষে। আমাদের শর্ত মানবেন না? তাহলে শান্তি নেই।’

রুশ প্রেসিডেন্টের এ অনড় অবস্থানের পেছনে কয়েকটি কারণ আছে।

প্রথমত, ক্রেমলিন মনে করে, ইউক্রেনে রুশ সেনারা যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।

দ্বিতীয়ত, কূটনৈতিক সাফল্য। সম্প্রতি চীন সফরে পুতিন অনেক বিশ্বনেতার সঙ্গে হাত মেলান এবং হাসিমুখে দেখা করেন। এর মাধ্যমে দেখানো হয় যে চীন, ভারত ও উত্তর কোরিয়ার মতো শক্তিশালী বন্ধু রাশিয়ার আছে।

এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গও আসে। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনকে আলাস্কায় শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর রুশপন্থী বিশ্লেষকেরা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমারা রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে যে ব্যর্থ হয়েছে—এ বৈঠক তার প্রমাণ।

ক্রেমলিনকে যুদ্ধ শেষ করতে রাজি করানোর জন্য ট্রাম্প আগে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন ও চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন। রাশিয়া যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা না করে তবে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

তবে ট্রাম্প সেসব হুমকি কার্যকর করেননি। আর এটা রাশিয়ার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ।

পুতিন প্রকাশ্যে ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। এরপরও তিনি ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।

তাহলে শান্তির সম্ভাবনা কতটুকু

পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট এ–ও বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখন রাশিয়া একদিকে এবং ইউক্রেন ও ইউরোপ (কিছুটা যুক্তরাষ্ট্রও) অন্যদিকে; একেবারেই ভিন্ন পথে, ভিন্ন দিকে ও ভিন্ন গন্তব্যে।’

যুদ্ধ শেষ করা, কিয়েভের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাওয়া এবং যুদ্ধের পর ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী যেন আরেকটি আগ্রাসন রোধ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী থাকে, তা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোর ওপর এখন জোর দিচ্ছে ইউক্রেন ও ইউরোপ।

পুতিন যখন আশার আলো দেখতে পাওয়ার কথা বলেন, তখন মনে হয়, তিনি এমন কিছু ভাবছেন, যার মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার জয় হবে এবং রাশিয়ার পক্ষে আরও বেশি করে একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রশ্নে বলতে হয়, এ দুই ভিন্ন পথ কখন বা কোথায় মিলবে, তা বোঝা কঠিন। অর্থাৎ দুই পক্ষের লক্ষ্য এক নয়—ইউক্রেনে ইউরোপ শান্তি চায়, আর পুতিন চান নিজের শর্তে বিজয়। তাই শান্তির সম্ভাবনা খুব কম।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!