ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইডেনে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: অতীতের শিক্ষা, আগামীর দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা

ইডেন কলেজ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫

ইডেনে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: অতীতের শিক্ষা, আগামীর দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা

ছবি: আমার ক্যাম্পাস

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ স্কাউটস-এর উদ্যোগে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: অতীতের শিক্ষা, আগামীর দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহিদ স্কাউট পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

শহিদ রাজিবুল করিমের মা মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌস অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘যদি জানতাম আমার সন্তানের জীবন এত ছোট হবে, তাহলে নিজের উন্নতির পেছনে সময় দিতাম না। আমার ছেলে কখনো নিজের জন্য কিছু চাইত না, সবসময় মানুষের সেবায় এগিয়ে আসত। পড়াশোনাতেও ছিল অসাধারণ মেধাবী— ক্লাস ফাইভ ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিল, এসএসসিতে ‘এ প্লাস’ করেছে, এইচএসসিতে সাতটি বিষয়ে ৯০-এর বেশি নম্বর পেয়েছিল। এমন প্রতিভাবান ছেলেকে হারানো খুব কষ্টের।’

শহিদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকার সংস্কার করুক বা নির্বাচন, আমাদের তাতে আপত্তি নেই। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। রক্তের বিনিময়ে দেশে পরিবর্তন এসেছে, অথচ শহিদ পরিবারের জন্য কোনো তহবিল নেই। এমনকি দোয়া বা স্মরণসভা করতেও অনেকে সময় দেন না— এটা খুবই কষ্টদায়ক।’

শহিদ মীর মুগ্ধর ভাই মীর মাহফুজুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘যাদের পরিবারে শহিদ হয়েছেন, তারাই বোঝেন এ বেদনা কতটা গভীর। জুলাই-আগস্টে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, অথচ আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি শহিদ পরিবারের ওপর লাঠিচার্জও হয়েছে, যা আরও বেশি কষ্ট দেয়। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই।’

শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, ‘আমরা চাই সুশৃঙ্খলভাবে সব কাজ সম্পন্ন হোক, তবে এখনো কিছু অস্থিরতা আছে। তবুও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শহিদরা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তাদের বাবা-মা অনেক কষ্টে সন্তানদের বড় করেছেন। স্কাউটরা গুলির মধ্যেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল— দেশের বিপদে তাদের এই আত্মত্যাগ অনুকরণীয়।’

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মাইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল; কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. রফিকুল ইসলাম; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহেনা পারভীনসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, শহিদদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা এবং পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।

উল্লেখ্য, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এ আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ও সাধারণ নাগরিকরা স্বাধীনতা, ন্যায্যতা ও সুশাসনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। শহিদ রাজিবুল করিম, গোলাম নাফিজ, মীর মুগ্ধসহ বহু স্কাউট ও তরুণদের আত্মত্যাগ এ গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রেখেছে এবং দেশের যুবসমাজকে আরও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা দিয়েছে।

আমার ক্যাম্পাস/তানজিলা আক্তার মাসুমা

Link copied!