প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়ায় হয়রানি কমাতে ঘরে বসে, কম খরচে এবং সহজভাবে অনলাইন বদলির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এতে শিক্ষকরা সুফল ভোগ করছেন, যার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। অনলাইন বদলির কার্যকারিতা ও সময় সাশ্রয় নিশ্চিত করতে, হয়রানি কমাতে এবং অধিদপ্তরের ওপর চাপ হ্রাস করতে আমি কয়েকটি মতামত পেশ করছি—
ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ:
১) উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের ওপর ন্যস্ত।
২) জেলা পর্যায়ে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের ওপর ন্যস্ত।
৩) বিভাগীয় পর্যায়ে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত বিভাগীয় উপপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষার ওপর ন্যস্ত।
৪) বিভাগের বাইরে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত।
অন্যান্য প্রস্তাবনা:
৫) শিক্ষক বদলিতে পারস্পরিক বদলির ব্যবস্থা থাকলে পদ শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
৬) অনেকে স্থায়ী ঠিকানায় চাকরি পেয়ে নিজের সন্তানের পড়াশোনা বা সুবিধার্থে ক্ষমতার প্রভাবে জেলা সদর, বিভাগীয় শহর বা রাজধানীতে বদলী হয়। শহরাঞ্চলে প্রতি ৫ বছর পর বাধ্যতামূলকভাবে অন্যত্র বদলি চালু করলে এই প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
৭) অনলাইন সিস্টেমে কেউ কেউ আইপিইএমআইএস (IPEMIS)-এ তথ্য গোপন বা সংশোধন করে, ফলে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা সুফল পাচ্ছেন না।
৮) সিটি কর্পোরেশন বদলীতে ১০ শতাংশ বহিরাগত কোটা থাকলেও তা প্রয়োগ হয়নি, ফলে ১০ শতাংশ কোটা অতিক্রম করে বদলি হয়েছে।
৯) প্রতিস্থাপনের অভাবে অনেকে বদলি করতে পারছেন না, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য হতাশাজনক।
১০) আইপিইএমআইএস -এ অনলাইনে ১০০ স্কোর পাওয়ার পরও কেউ কেউ বদলি হতে পারছেন না।
উদাহরণস্বরূপ: মোছা. রেজিনা পারভীন, সহকারী শিক্ষিকা, পত্নীতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওগাঁ। তিনি আন্তঃউপজেলা অনলাইনে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে বদলির জন্য আবেদন করেন। তিনি তালগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি চেয়েছিলেন। স্কোর ১০০/১০০ থাকা সত্ত্বেও মনোনীত হননি। বরং, ঐ বিদ্যালয়ে মনোনীত হয়েছেন লাজিজুন নাহার, যার স্কোর ৯৫.২৭।
উপরিউক্ত প্রক্রিয়াগুলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মনিটরিং সিস্টেম, অনলাইন অভিযোগ সেল এবং প্রতিকার ব্যবস্থার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শিক্ষকরা উপকৃত হবেন এবং পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারবেন।
আইন বিদ্যমান হলেও কার্যকর প্রয়োগের অভাবে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ প্রস্তাবগুলো সুচিন্তিতভাবে বাস্তবায়ন করলে শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত হতাশা অনেকাংশে কমে যাবে।
লেখক: সমন্বয়ক, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ
আপনার মতামত লিখুন :