ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

জুবায়েদ হত্যাকান্ডে জবি শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত 

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫

জুবায়েদ হত্যাকান্ডে জবি শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত 

ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের (১৫তম ব্যাচ) মেধাবী শিক্ষার্থী মোঃ জুবায়েদ হোসেন-এর হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

আজ বুধবার (২২ অক্টোবর)সংবাদ সম্মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে অনুষ্ঠিত হয় | সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্‌দীন। তিনি বলেন, জুবায়েদ হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় চিহ্নিত আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করায় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা আশা করি, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক অপরাধীর দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

অধ্যাপক ড. রইছ উদ্‌দীন আরও উল্লেখ করেন, জুবায়েদের পরিবার গ্রাম থেকে এসে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে পরিবারটিকে সহায়তা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরপর তিনি পুলিশ প্রশাসন, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন—

উত্থাপিত প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণসমূহ হলো:

১. এজাহার সংক্রান্ত প্রশ্ন:
মামলার আইনজীবীর ভাষ্যমতে, এজাহারে অভিযুক্ত ইন্ধনদাতা ও মূল দায়ী বর্ষার একটিমাত্র উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ঘটনাদিনে বর্ষা নিজেই জুবায়েদকে ফোন করে তার অবস্থান জানে এবং তার মোবাইল ট্র্যাক করে। এটি কেন এজাহারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তা প্রশাসনের তদন্তে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

২. সিসিটিভি ফুটেজ সংক্রান্ত প্রশ্ন:
ফুটেজে দেখা গেছে, দুজন খুনি কালো ও হলুদ টি-শার্ট পরিহিত ছিল। কিন্তু গ্রেফতারকৃত আসামিদের পোশাক পুলিশ কি জব্দ করেছে? যদি করে থাকে, তবে তার ফরেনসিক প্রতিবেদন কবে পাওয়া যাবে?

৩. ঘটনাস্থল তদন্ত সংক্রান্ত প্রশ্ন:
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সময় ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত এমন ঘটনায় উভয় পক্ষই আহত হয় এবং আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। সেক্ষেত্রে বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের কেউ কি ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছেন, বা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়েছে কি না— তা স্পষ্ট নয়।

৪. বর্ষার পারিবারিক ভূমিকা সম্পর্কিত প্রশ্ন:
যদি বর্ষার সাথে জুবায়েদের সম্পর্ক থেকে থাকে, তবে তার বাবা-মা তা জানতেন কি না এবং জানলে তাদের ভূমিকা কী ছিল— এই বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা প্রয়োজন। কারণ তারা সমর্থন দিলে তারাও মামলার অংশীদার হতে পারেন।

৫. হত্যার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রশ্ন:
নিহত জুবায়েদ শারীরিকভাবে আসামী মাহিরের তুলনায় শক্তিশালী ছিলেন। তবুও মাহির এক কোপেই তাকে হত্যা করতে সক্ষম হলো কীভাবে? এটি কি কোনো প্রশিক্ষিত বা পেশাদার খুনির কাজ ছিল? এবং মূল হত্যাকারীকে আড়াল করতে মাহিরকে ‘হত্যাকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না, তা তদন্তে স্পষ্ট হওয়া দরকার।

৬. ঘটনাস্থল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন:
হত্যাকাণ্ডটি বর্ষার নিজ বাসভবনে সংঘটিত হয়েছে— যা স্বাভাবিক নয়। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের সাথে অন্য কিছুর ইঙ্গিত দেয়। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করা।

পরিশেষে অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্‌দীন সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর যথাযথ তদন্ত ও উত্তর প্রদান করে যেন জুবায়েদ হত্যাকাণ্ডের সব ধরনের রহস্য উদ্ঘাটন করা হয় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভূঁইয়া এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দ এবং অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য,জুবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ তম ব্যাচের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী | গত ১৯ অক্টোবর আরমানিটোলায় নূরবক্স লেনের রৌসান ভিলায় টিউশন পড়াতে গিয়ে বাসার সিঁড়িতে তার ছাত্রী(বর্ষা) এবং ছাত্রীর প্রেমিক(মাহির) ছুরিকাঘাতে জুবায়েদ কে হত্যা করে

আমার ক্যাম্পাস/রিয়ন

Link copied!