বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশা রয়েছে। এই নির্বাচন শুধু একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার।
শিক্ষার্থীরা যখন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বা নেতৃত্বের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখন তারা গণতন্ত্রের সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাম্পাসই হলো গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গঠনের প্রথম পাঠশালা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই ক্যাম্পাসে একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি। সংসদ নির্বাচন সেই সুযোগ তৈরি করে।”
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় শিক্ষার্থীদের—হোস্টেল সংকট, সিট বণ্টন, টিউশন ফি বৃদ্ধি, পাঠাগার ও ল্যাব সুবিধার ঘাটতি ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধানে ছাত্র সংসদ একটি সংগঠিত কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে। নির্বাচিত প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করতে পারেন, যা ব্যক্তিগতভাবে সম্ভব হয় না।
ছাত্র সংসদ শুধু দাবি-দাওয়া নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। তারা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় হয়।
তবে দুঃখজনকভাবে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব, সহিংসতার আশঙ্কা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এ প্রক্রিয়া প্রায়ই স্থবির হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, এতে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেখানে সংসদ নেই, সেখানে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠও শোনা যায় না।”
শিক্ষার্থীদের আশা—নিয়মিত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে, শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অধিকার আদায়ে অংশ নিতে পারবেন। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সচল হলে একটি দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক ও সচেতন প্রজন্ম গড়ে উঠবে।
আপনার মতামত লিখুন :