ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
বেসরকারি খাতের ওপর জরিপ

আর্থিক দুশ্চিন্তা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা কমায়

আমার ক্যাম্পাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫

আর্থিক দুশ্চিন্তা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা কমায়

আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং পর্যাপ্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধার অভাব কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ ও কর্মদক্ষতা কমায় এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেসব প্রতিষ্ঠান একটি শক্তিশালী ও দক্ষ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে চায়, তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেটলাইফ বাংলাদেশ সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ‘এমপ্লয়ি বেনিফিট ট্রেন্ডস স্টাডি’ (ইবিটিএস) শীর্ষক একটি গবেষণা করে, যেখানে দেশের বেসরকারি খাতের কর্মী ও নিয়োগদাতাদের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে এমন তথ্য উঠে আসে। 

গতকাল রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইবিটিএস প্রকাশ করে মেটলাইফ বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমদ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক চাপ ও পর্যাপ্ত সুবিধার অভাব কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মনোবলকে দুর্বল করে। কর্মীদের বিস্তৃত সুবিধা দেওয়া, তাদের জন্য যত্নবান সংস্কৃতি তৈরি করা এবং যোগাযোগ উন্নত করার উদ্যোগ বিশ্বস্ততা বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।’ 

ইবিটিএস জরিপে তৈরি পোশাক, ব্যাংকিং, এফএমসিজি, টেলিযোগাযোগ, এনজিওসহ বিভিন্ন খাত থেকে ৫৭১ জন কর্মী এবং ১৪২টি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়েছে। কর্মীদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন তাদের কর্মীদের জন্য আর্থিক ও অনার্থিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আরও ভালোভাবে সাজাতে পারে, সেই লক্ষ্যেই দেশে এই প্রথমবারের মতো এমন একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৬ শতাংশের বেশি কর্মী বলেছেন, আর্থিক দুশ্চিন্তা তাদের কাজের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। ৪১ শতাংশ মনে করেন, আর্থিক চাপের সঙ্গে মানসিক অসুস্থতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে ৬৭ শতাংশ কর্মী তাদের বর্তমান আর্থিক অবস্থার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এছাড়া ৫৩ শতাংশের বেশি কর্মীর অবসর নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রায় অর্ধেক কর্মী চান, নিয়োগদাতারা যেন অবসর-পরবর্তী আয়ের জন্য সঞ্চয় ব্যবস্থায় সহায়তা করেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি খাত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়, চাকরির কঠিন প্রতিযোগিতা এবং মানসিক চাপ কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলছে। এমন সময়ে কর্মীরা শুধু বেতন নয়, তাদের সার্বিক ভালো থাকার নিশ্চয়তাও চান। 

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয়, মেটলাইফ বাংলাদেশের সিইও আলা আহমদ প্রমুখ।

জরিপে ৭২ শতাংশ কর্মী বলেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতি যত্নবান হলেও সার্বিক কল্যাণ ও সহায়তা প্রদানে এখনও ঘাটতি রয়েছে। ৭৮ শতাংশ কর্মী বলেছেন, বীমা ও মানসিক স্বাস্থ্যের মতো সুবিধা তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরও বেশি আনুগত্যশীল করে তোলে। কিন্তু এসব সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠানে ঘাটতি রয়েছে, যা কর্মীদের আস্থার অভাব সৃষ্টি করে। 

নিয়োগদাতাদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ বলেছেন, কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের ৪৯ শতাংশ বলেছেন, কর্মীদের সম্পৃক্ততা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে ৫১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দক্ষ কর্মীদের ধরে রাখতে এবং মনোবল বাড়াতে কর্মীদের সুবিধা প্রদানে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এছাড়া ৭৮ শতাংশ নিয়োগদাতা মনে করেন, কর্মীদের সুবিধা প্রদান কর্মস্থলের সংস্কৃতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!