ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
সাক্ষাৎকারে ড্যারেন স্যামি

টি-টোয়েন্টিকে নিজেদের করে নিয়েছিলাম

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫

টি-টোয়েন্টিকে নিজেদের করে নিয়েছিলাম

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি এখন দলটির প্রধান কোচ। গতকাল চট্টগ্রামে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন বিশ্বকাপ জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎসহ আরও অনেক কিছু নিয়েই—

প্রশ্ন: আপনার জনপ্রিয়তা দিয়েই শুরু করি। এত এত মানুষ এসে আপনার সঙ্গে ছবি তুলছে, কথা বলতে চাইছে। বাংলাদেশেও যে আপনাকে ঘিরে এত আগ্রহ, কেমন লাগে?

ড্যারেন স্যামি: যখন কেউ এসে তাদের ভালোবাসার কথা জানায়, তখন শুধু মনে হয় জীবনে যা–ই করেছি—মানুষকে হয়তো তা অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সবাই–ই চায় তার কাজের একটা ছাপ রেখে যেতে। খেলার স্পিরিট ধরে রাখা ও দর্শকদের আনন্দটাই যে মুখ্য, এটা নিয়ে আমি অনেক কথা বলেছি। নিজেও তা মেনে চলার চেষ্টা করি। এ রকম ভালোবাসা পাই বলে বাংলাদেশে আসাটাও সব সময় উপভোগ করি।

প্রশ্ন: আপনাকে সব সময় খুব হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। সবার সঙ্গে বেশ সৌহার্দ্য নিয়ে কথা বলেন। এটা কি সহজাতই?

স্যামি: সবাইকে যে সন্তুষ্ট করতে পারি, তা নয়। আমি ভদ্রতা রক্ষার বিষয়গুলো শিখেই বড় হয়েছি। আপনি জানেন না, ছবি তুলতে আসা মানুষটা হয়তো অনেক খারাপ কিছুর ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। হয়তো মানুষটা আপনার জন্য লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করছে। শুধু একবার হাত মেলালে, মাঠ থেকে হাত নাড়ালে, একটু হাসলে অথবা একটা ছবি তুললেই যদি সে খুশি হয়—তাহলে তা করতে সমস্যা কী! এ জন্যই চেষ্টা করি সব সময় সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে। যারা আদর্শ কিংবা নায়ক, যা–ই বলেন না কেন, এটা তাদের দায়িত্ব—যারা ভালোবাসে, সুযোগ পেলে তাদের কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়া।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে তো আপনার অনেক স্মৃতি। ২০১৪ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়া সেই দৌড়, আপনাদের নাচ—স্মৃতিটা নিশ্চয়ই আপনার মনে গেঁথে থাকবে সারা জীবন...

স্যামি: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য ভালো একটা অধ্যায় ছিল সেটা। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়টা অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য বিশেষ কিছুই ছিল। আমরা তখন এমন একটা দল ছিলাম, দুনিয়ার যে কাউকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল। অসাধারণ সব খেলোয়াড় ছিল দলে। ওই সময়টুকু সব সময়ই আমার জীবনে রঙিন স্মৃতি হয়ে থাকবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রতিনিধিত্ব করা তখন ছিল আনন্দ ও গর্বের। আমি কোচ হিসেবে দলটার দায়িত্ব নিই স্বর্ণালি সময়টা ফিরিয়ে আনতেই। এখনকার খেলোয়াড়দের ওপর সেই প্রভাবটা রাখতে চাই, ওই জায়গাটায় নিয়ে যেতে তাদের সাহায্য করতে চাই। খেলোয়াড় হিসেবে যেভাবে চেষ্টা করেছিলাম, এখন কোচ হয়েও ওভাবেই করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: দলে এত এত তারকা ছিল—ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড, ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল। এটা আপনাকে সাহায্য করত নাকি মাঝেমধ্যে ঝামেলায়ও ফেলত?

স্যামি: দলটা অভিজ্ঞতা আর তারকায় ভরপুর ছিল। আমি বলব না তাদের সামলানো সহজ ছিল, অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিংই ছিল আসলে। কিন্তু একটা জিনিস তফাত গড়ে দিত। যখন আমরা মাঠে নামতাম, তখন সবকিছুই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘিরে। কারও ব্যক্তিগত কিছু ছিল না সেখানে। অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজ ছিল শুধু তাদের বুঝিয়ে দেওয়া, কী করতে হবে। দলে মারলন স্যামুয়েলস ছিল, তার নাম খুব বেশি মানুষ নেয় না। কিন্তু আমাদের দুটি বিশ্বকাপ ফাইনালে সেই টেনে নিয়ে গেছে। পুরোটা সময়ই তার অবদান ছিল অসাধারণ। তখন আমাদের অনেক বেশি টি–টোয়েন্টি তারকা থাকায় স্যামুয়েলস আড়ালে থেকে গেছে। দুজন বোলার ছিল, যারা শীর্ষ পাঁচে ব্যাট করতে পারত। ব্যাটসম্যানদের সবাই মারতে পারত। ওই দশকে টি–টোয়েন্টিটাকে নিজেদের করে নিয়েছিলাম আমরা। অধিনায়ক হিসেবে তার অংশ হতে পারা ছিল গর্বের।

প্রশ্ন: তখন তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে আর টেস্টে তেমন ভালো করছিল না। আপনার টি–টোয়েন্টি দলটা আলাদা হলো কীভাবে?

স্যামি: আমাদের যে খেলোয়াড় ছিল, তাদের সঙ্গে এ সংস্করণটাই বেশি মানানসই ছিল। অন্য দুই সংস্করণের চেয়ে এটাতে আমাদের বেশি অভিজ্ঞতা ছিল। আমাদের ক্রিকেটাররা দুনিয়াজুড়ে টি–টোয়েন্টি খেলে বেড়াত, ওখান থেকে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করে এসে সবকিছু ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ঢেলে দিত। দলের সবাই খেলাটা খুব ভালো বুঝত। অধিনায়ক হিসেবে কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল তাতে।

প্রশ্ন: আপনিই বরং একটু আলাদা ছিলেন তাঁদের তুলনায়। সবকিছুই পারেন, কিন্তু কোনোটাতেই দলের সেরা নন। এ নিয়ে তো সমালোচনাও হতো!

স্যামি: আমি কখনোই এসব সমালোচনা মাথায় নিইনি। আমার কাজ কী, দলে ভূমিকা কেমন হবে, কী করা দরকার তা খুব ভালো বুঝতাম। সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে সেটাই করার চেষ্টা করেছি। মানসিকতাই আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। আমাকে নিয়ে প্রথম দিন থেকে সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু তাতে কী হয়েছে! একসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মাত্র একটা ম্যাচ খেলতে চাইতাম। অথচ আমি ১৪ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি। দুটি বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক হয়েছি। মাঠে যাওয়ার সময় আমি শুধু ভাবতাম, সবকিছু দেব। ব্যস, এটুকুই। বাকি কী হলো, সেসব নিয়ে কখনো সেভাবে ভাবিইনি।

প্রশ্ন: এখন যে টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট এত জনপ্রিয়, এর পেছনে আপনাদের দুটি বিশ্বকাপ জেতানো দলের বড় অবদান আছে বলে অনেকে মনে করেন। আপনারও কি তাই মনে হয়?

স্যামি: অবশ্যই। আশির দশকে যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায় আধিপত্য দেখিয়েছে, সবাই তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো হতে চাইত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মতো খেলতে চাইত। আমাদের দলটাও তেমনই ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই ধাপে বিশ্ব ক্রিকেটে আধিপত্য দেখিয়েছে। সত্তর থেকে আশির দশকে একবার, আরেকটা ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। তখন আমরা দুনিয়াকে দেখিয়েছি কীভাবে টি–টোয়েন্টি খেলতে হয়। তখন আমাদের অনেক কিছু নিয়ে সমালোচনা শুনতে হয়েছে। এখন দেখি সবাই তা–ই করে!

প্রশ্ন: এখন তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ভুগছে। আপনি এ নিয়ে অনেক কথাও বলেন। অন্যদের এখানে কী করার আছে?

স্যামি: সবাইকে বুঝতে হবে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটকে এই দুনিয়ায় থাকতে হবে। ভালোভাবে চলছে, এমন একটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকেই খেলাটার স্বার্থে দরকার, যেটা দুনিয়া একসময় উপভোগ করেছে।

প্রশ্ন: আপনি কিছুদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের স্বাধীন পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

স্যামি: দায়িত্বটা আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। আমি এখন বুঝি ক্রিকেটে মাঠ তৈরি, মার্কেটিং বা অর্থনৈতিক দিক কিংবা অন্যান্য বিষয়ে বোর্ডের কতটুকু আগ্রহ আছে। আমি তখন ক্রিকেটটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছি; যেটা আপনার আসল পণ্য। দিন শেষে সবার চাকরি টিকিয়ে রাখে মাঠের ক্রিকেটই।

প্রশ্ন: সে জন্যই কি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে থেকে গেলেন?

স্যামি: আমাদের সামনে কিছু লক্ষ্য আছে, বিশেষত ২০২৭ বিশ্বকাপকে ঘিরে। আগে সরাসরি খেলাটা নিশ্চিত করতে হবে, এরপর বিশ্বকাপও জিততে চাই। টি–টোয়েন্টিতে আমাদের অনেক ভালো সুযোগ আছে আরেকটা বিশ্বকাপ জেতার।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!