শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব এখন শান্তি না কি যদ্ধের পথে, এই কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি। চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তার পাশে ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। এই কুচকাওয়াজটি পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি এক ধরনের বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
পুতিন ও কিম অন্যান্য অনেক দেশের নেতাদের সঙ্গে এই কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছেন। বিশাল এই আয়োজনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে চীনের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী স্মরণ করা হচ্ছে, যা চীনে জাপানি আগ্রাসন যুদ্ধ নামে পরিচিত।
বিশ্লেষকদের মতে, সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল তিন নেতার একসঙ্গে লাল গালিচা দিয়ে হেঁটে আসা, পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো এবং কথোপকথন করা; যা পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি একপ্রকার চ্যালেঞ্জের বার্তা পাঠিয়েছে। এই পরিস্থিতি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও অস্থির কূটনীতি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ককে টানাপড়েনের মধ্যে ফেলেছে।
শি জিনপিং এসসিও সম্মেলনে পুতিনকে স্বাগত জানান, যা বিজয় দিবস কুচকাওয়াজের পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়।
শি বলেন, “আজ মানবজাতি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। শান্তি না কি যুদ্ধ, সংলাপ না কি সংঘাত, সমন্বয় না কি শূন্য-ফলাফলের রাজনীতি; এসব প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, “চীনা জাতি ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়েছে। চীন কখনো কোনো রকমের হুমকিতে ভয় পায় না।” এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রতি নতুন বার্তা দিয়েছেন। সামরিক প্রদর্শনীর শুরুতে তিনি বলেন, “চীনকে থামানো যাবে না।”
অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের গ্লোবাল চায়না হাবের গবেষক ওয়েন-তি সাং বলেন, “বেইজিং এই কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছে—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখে, তবুও চীন তার বন্ধুর পাশে থাকতে পিছপা হবে না।”
চীন এই আয়োজনকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংহতির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কিম জং উনের এই সফর তার গত ছয় বছরে মাত্র দ্বিতীয় বিদেশ সফর এবং প্রথমবারের মতো তিনি শি ও পুতিনের সঙ্গে একসঙ্গে জনসম্মুখে হাজির হলেন।
এ ঘটনা ট্রাম্পের দিক থেকেও দ্রুত প্রতিক্রিয়া এনেছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে লিখেছেন. “শি জিনপিং এবং চীনের চমৎকার জনগণকে আমি একটি মহান ও দীর্ঘস্থায়ী উৎসবের দিন কামনা করি।” তিনি আরও লেখেন, “আপনারা যখন আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, অনুগ্রহ করে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা পৌঁছে দিন।”
শি জিনপিং এসসিও সম্মেলনে পুতিনকে স্বাগত জানান, যা বিজয় দিবস কুচকাওয়াজের পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়।
শি বলেন, “আজ মানবজাতি এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। শান্তি না কি যুদ্ধ, সংলাপ না কি সংঘাত, সমন্বয় না কি শূন্য-ফলাফলের রাজনীতি; এসব প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।"
পুতিনের বেইজিং সফরের সময়েই রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর বড় আকারের এক রাতভর বিমান হামলা চালায়, যাতে অন্তত চারজন রেলকর্মী আহত হন এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পোল্যান্ড তাদের প্রতিরক্ষা বিমান মোতায়েন করে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ও মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা নেতা এই আয়োজনে অংশ নেননি। কিম তার মেয়ে কিম জু-এ-কে সঙ্গে এনেছেন, যা উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কুচকাওয়াজ শির কূটনৈতিক ক্ষমতা ও পশ্চিম নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার প্রচেষ্টা তুলে ধরছে। কয়েক দিন আগেই চীনের তিয়ানজিন শহরে “গ্লোবাল সাউথ” দেশগুলোর নেতাদের একটি বড় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে পুতিনও অংশ নেন।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
আপনার মতামত লিখুন :