রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতা ও সাবেক এক সমন্বয়ক। গত ৩ সেপ্টেম্বর তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ক্যাম্পাসে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
আবেদনকারীদের দাবি, বিগত রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে হয়রানি ও কারাবরণের কারণে তারা সঠিকভাবে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে পারেননি। তাই তারা দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করার সুযোগ চান। আবেদনপত্রে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
আবেদন করা নেতারা হলেন—শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, সিনিয়র সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না।
মাস্টার্সে ভর্তির প্রচলিত নিয়ম
রাবিতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য কিছু শর্ত রয়েছে—
স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে।
আবেদনকারী যে বিভাগ থেকে অনার্স করেছেন, শুধু সে বিভাগেই আবেদন করতে পারবেন।
স্নাতক ডিগ্রির পর তিন শিক্ষাবর্ষের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করে নিজ নিজ বিভাগ ছাত্র বাছাই করবে।
আবেদন ফি এক হাজার টাকা, যা অনলাইনে জমা দিতে হয়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে—‘বিশেষ বিবেচনায়’ এ নিয়ম পরিবর্তন করা হবে কি না।
শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “ডাবল মাস্টার্সের সুযোগ দেওয়া হলে এর ফলাফল ইতিবাচক হবে। অভিজ্ঞ নেতারা আবারও পড়াশোনা ও নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্য বাড়বে, প্রতিযোগিতা হবে গণতান্ত্রিক।”
তার মতে, যারা রাজপথে সংগ্রাম করে পিছিয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য এটি ন্যায্য সুযোগ।
তবে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুস্তাকুর রহমান জাহিদ ভিন্নমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ডাবল মাস্টার্সের বিষয়টি রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। প্রশাসন যেন কোনো পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত না নেয়। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
সাবেক সমন্বয়ক ও ভিপি পদপ্রার্থী মেহেদী সজীব বলেন, “যদি ডাবল মাস্টার্সের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুনরায় করতে হবে। এতে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। ১৯৯২ সালের পর আর নির্বাচন হয়নি, এখন এই বিতর্ক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।”
অন্যদিকে সাবেক সমন্বয়ক ও জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “এ দাবি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ মুহূর্তে এ বিষয়টি উত্থাপনই ষড়যন্ত্রের প্রমাণ।”
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতা ফুয়াদ রাতুল বলেন, “কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি হলে প্রশাসন পাত্তা দিত না। এটি প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব।”
ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “সুবিধা যদি দেওয়া হয়, তবে তা সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে। কয়েকজন নেতার জন্য আলাদা সুবিধা দেওয়া বৈষম্য সৃষ্টি করবে। এই সিদ্ধান্ত অ্যাকাডেমিক পরিবেশে বিশৃঙ্খলা আনতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “উপাচার্য বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পাঠিয়েছেন। সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে—তারা ভর্তি হতে পারবে কি না। হ্যাঁ হলে ভর্তি হবে, না হলে হবে না।”
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না আসায় এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। অনুমোদন পেলে প্রশ্ন উঠছে—নতুন ছাত্রত্ব পাওয়া নেতারা হলে থাকতে পারবেন কি না। এখন দেখার বিষয়, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কী সিদ্ধান্ত নেয়।
আপনার মতামত লিখুন :