জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইকরা পরিষদ’ তাদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে। সেখানে শিক্ষা ও গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আধুনিক, নারীবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নির্মিত ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে প্যানেলের সদস্যরা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
তাদের ঘোষিত ইশতেহারে ৮ দফা অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে—
১. আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা ২. শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ, মুক্ত ও বৈচিত্র্যময় ক্যাম্পাস ৩. পরিকল্পিত আবাসন ও উন্নতমানের খাবার সরবরাহ ৪. নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষাঙ্গণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৫. মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ৬. সুসমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা ৭. ক্রীড়াচর্চা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ৮. পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস
ইশতেহারের মূল বিষয়গুলো
প্রথম দফায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম নির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরিচালিত হবে। নিয়মিত জাকসু নির্বাচন অন্তর্ভুক্তকরণ, পাঠ্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, আধুনিক শ্রেণিকক্ষ এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পূর্ণ সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়।
দ্বিতীয় দফায় বলা হয়, গেস্টরুম সংস্কৃতি, র্যাগিং, নিপীড়ন ও জবরদস্তিমূলক রাজনীতি ক্যাম্পাস থেকে উচ্ছেদ করা হবে। সব ধর্ম ও মতের শিক্ষার্থীর সহাবস্থান, নারী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের উপাসনার সুযোগ, জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন ও অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে বিশেষ সেল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
তৃতীয় দফায় নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু থেকেই সিট নিশ্চিত করা, উন্নত খাবার সরবরাহ, ক্যানটিন-রেস্টুরেন্টের খাবারের পুষ্টিগুণ পরীক্ষা এবং ভর্তুকি বৃদ্ধির অঙ্গীকার করা হয়।
চতুর্থ দফায় নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার, হলে অবকাঠামো সংস্কার, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন ও নারী চিকিৎসক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
পঞ্চম দফায় আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র, ২৪ ঘণ্টা সেবা, টেলিমেডিসিন চালু, জরুরি ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধার ঘোষণা করা হয়।
ষষ্ঠ দফায় নতুন রুটে পরিবহন চালু, বাসে জিপিএস ট্র্যাকার, মোবাইল অ্যাপস এবং অটোরিকশা-ইলেকট্রিক কার চালুর পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
সপ্তম দফায় আন্তবিভাগীয় ও আন্তহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ টুর্নামেন্ট, আধুনিক জিমনেসিয়াম, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রসার ও মাদকবিরোধী কার্যক্রম চালুর অঙ্গীকার করা হয়।
অষ্টম দফায় পরিবেশ রক্ষা, লেকের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, অতিথি পাখির জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, ডাস্টবিন বৃদ্ধি ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
এর আগে, ২৮ আগস্ট জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে মো. শেখ সাদী হাসানকে সহসভাপতি এবং তানজিলা হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান বলেন, “আমরা গুম-খুন, নিপীড়ন ও রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণ মোকাবিলা করে দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য-একটি শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক জাহাঙ্গীরনগর গড়ে তোলা এবং নিয়মিত জাকসু নির্বাচন নিশ্চিত করা। আমরা ক্যাম্পাসে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে হেপাটাইটিস-বি ভ্যাক্সিনের আওতায় এনেছি। সামনে একটা ২০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার করারও পরিকল্পনা রয়েছে শাখা ছাত্রদলের।”
আপনার মতামত লিখুন :