ঢাকা রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১১তম গ্রেড বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম, আন্দোলনে সহকারী শিক্ষকরা

তিন দাবিতে আল্টিমেটাম প্রাথমিক শিক্ষকদের, কী ভাবছে সরকার

আমার ক্যাম্পাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫

তিন দাবিতে আল্টিমেটাম প্রাথমিক শিক্ষকদের, কী ভাবছে সরকার

১১তম গ্রেডের দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সমাবেশ, ছবি: সংগৃহীত

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের (বর্তমান পদ নাম শিক্ষক) ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নসহ তিন দফা দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ

অপরদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর দ্রুত সমস্যা সমাধানে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কনসালটেশন কমিটির প্রতিবেদন ও শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে বেতন গ্রেড বাস্তবায়ন প্রস্তাবনায় সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড এবং ১২তম গ্রেডের আর্থিক সংশ্লেষসহ যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে।

তবে এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়ন কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, জাতীয় বেতন কমিশনের জন্য জাতীয় বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা সময় সাপেক্ষ বিষয়

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অধিদফতর থেকে যৌক্তিকতাসহ সুপারিশ দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে পে-কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে দিয়েছে। হয়তো আগামী সপ্তাহে পে-কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেবো।’

১১তম গ্রেড নাকি ১২তম গ্রেড বাস্তবায়ন করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তিসহ ১১তম ও ১২তম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা দিয়েছি, সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।’

অর্থ উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের বৈঠক

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থ সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে বৈঠক হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ওই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা পরামর্শ দিয়ে জানান, যেহেতু পে-কমিশন গঠন করা হচ্ছে, সেখানে যেন যুক্তিসহ এটি উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক।

জাতীয় বেতন কমিশনে ১১তম গ্রেডের সুপারিশ

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জাতীয় বেতন কমিশনের কাছে ১১তম গ্রেডে শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬৫,৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে অনুমোদিত সহকারী শিক্ষক পদ ৩,৬৯,২১৬টি, যেখানে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩,৫২,২০৮ জন, শূন্য পদ ১৭,০১৮টি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের বিদ্যমান বেতন গ্রেড জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর ১৩তম গ্রেড। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরে সমমানের যোগ্যতার কর্মকর্তা বা শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন ভাতা পান। এজন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বেতন স্কেল উন্নীত করে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর দশম গ্রেডে বেতন ভাতাদি প্রদানের দাবি করেছেন।

সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের ইতিহাস

সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের পরবর্তী ধাপে চাকরি করতেন সহকারী শিক্ষকরা। ২৯ আগস্ট দুই ধাপ বেতন বৈষম্য সৃষ্টি হলে সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষক সমিতি থেকে আলাদা হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

দশম গ্রেডের দাবিতে সরকারি পদক্ষেপ না থাকায় প্রধান শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। রিটের রায়ে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার দেশের সব প্রাথমিক শিক্ষকের দশম গ্রেড বাস্তবায়ন করে।

নতুন আন্দোলনের ঘোষণাঃ ১১তম গ্রেড

বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলনে নামছেন। ৩০ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কমিয়ে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করতে হবে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করব।’

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি

১. সহকারী শিক্ষকদের এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ।
২. প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পদ পূরণ।
৩. ১০ ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড প্রদানে উন্নীত স্কেলকে উচ্চতর গ্রেড হিসেবে গণনা না করা।

বেতন বৈষম্য ও বর্তমান অবস্থা

২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন আপগ্রেড হলেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে তিন ধাপ বেতন বৈষম্য তৈরি হয়। ২০২০ সালে সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও তারা এখনো প্রধান শিক্ষকের তুলনায় পিছিয়ে আছেন।

বর্তমান সরকার প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করেছে, কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরা ১০ম গ্রেড, আর সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!