ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট: হতাশার অন্ধকার থেকে প্রেরণার আলোতে যাত্রা

বিবিধ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫

পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট: হতাশার অন্ধকার থেকে প্রেরণার আলোতে যাত্রা

ছবিঃ সংগৃহীত

পরীক্ষার ফলাফল প্রত্যাশার বাইরে গেলে অনেক শিক্ষার্থী হতাশা, উদ্বেগ এবং অস্থিরতার মধ্যে পড়ে। বন্ধুদের সাফল্যের সঙ্গে নিজের তুলনা, পরিবারের প্রতিক্রিয়া বা শিক্ষকের মন্তব্য কখনও কখনও চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় মনে হয়, এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীই তোমার বিরুদ্ধে। কিন্তু খারাপ রেজাল্ট কেবল একটি অধ্যায়; এটি তোমার জীবনের শেষ কথা নয়।

গ্রামের ছোট ছেলে আদনানের গল্প একটি জীবন্ত উদাহরণ। আদনান মোটামুটি ভালো ছাত্র ছিলেন এবং পরীক্ষা দিয়েছিলেন যথাযথভাবে। তবে একবারের ফলাফলে তার জিপিএ সন্তোষজনক ছিল না। তার বাবা-মা ও আশেপাশের কেউ তাকে সমর্থন না দিয়ে তাচ্ছিল্য করেছিল। অনেকেই তাকে ব্যর্থ ভেবেছিলেন। কিন্তু আদনান হাল ছাড়েনি। কলেজে প্রবেশের পর নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে, রাতদিন পরিশ্রম করে, দেশের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় সফল হয়েছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ২০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নিয়েছে। এই গল্পটি প্রমাণ করে, খারাপ রেজাল্ট মানেই ব্যর্থতা নয়; অধ্যবসায় এবং দৃঢ়সংকল্পই সত্যিকারের সফলতা তৈরি করে।

আরেকটি শিক্ষণীয় উদাহরণ একজন প্রথিতযশা পণ্ডিতের। স্কুলে তিনি ক্লাসে ভালো করতে পারতেন না। একদিন শিক্ষক তাকে পড়ার অক্ষমতা নিয়ে তিরস্কার করেন এবং ক্লাস থেকে বের করে দেন। হতাশ হয়ে নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে একটি পাথরের ঘাটে বসে বিশ্রাম নেন। তখন তিনি লক্ষ্য করেন, গ্রামের মহিলারা যেভাবে মাটির কলসের ঘষায় পাথর ক্ষয় হয়, ঠিক তেমনি তিনি চেষ্টা করলে তার মস্তিষ্কও ধারালো হবে। এক মাসের কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি ক্লাসে ফিরে আসেন এবং শিক্ষকরা তার অগ্রগতিতে অবাক হন। পরবর্তীতে তিনি সময়ের অন্যতম প্রখ্যাত পণ্ডিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারাপ ফলাফল বা কোনো বিপর্যয় মানেই কেউ আত্মহত্যার পথে যাবে না। যারা আত্মঘাতী হয়, তারা সাধারণত ইতিমধ্যেই আবেগপ্রবণ এবং মানসিক চাপের প্রতি সংবেদনশীল। তাই এই সময়ে বাবা-মা, পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদের সহায়তা অপরিহার্য। সন্তানদের হতাশা, ক্ষোভ বা অস্থিরতা বুঝে, তাদের উৎসাহ দেওয়া ও প্রেরণা যোগানো জরুরি।

যে শিক্ষার্থীরা আজ খারাপ রেজাল্টের কারণে মন খারাপ করছেন, তাদের জন্য মূল বার্তা হলো: চোখের পানি মুছে নতুন অধ্যায় শুরু করা। পূর্বের ফলাফল সামান্য হলেও, নিয়মিত পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব। পরীক্ষার রেজাল্ট কখনো মানুষের বুদ্ধিমত্তা বা সামর্থ্য নির্ধারণ করে না। জীবনে সাফল্যের পথ স্বপ্ন এবং চেষ্টা দ্বারা রচিত হয়।

পরীক্ষার ফলাফল কেবল একটি অধ্যায়; জীবন এখনও অনেক দীর্ঘ এবং সম্ভাবনায় পূর্ণ। যারা আজকে হতাশ, তারা কয়েক বছর পর বুঝবে, যে দিনগুলোকে তারা ছোট করে দেখেছে, সেগুলোই ভবিষ্যতের বড় সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করেছে। তাই ব্যর্থতা মানে শেষ নয়, বরং এটি নতুন প্রেরণা এবং চ্যালেঞ্জের শুরু। স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে ধরে রাখলে, আজকের খারাপ রেজাল্টও আগামী দিনের সাফল্যের প্রথম ধাপ হয়ে ওঠে।

পরিশেষে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে: খারাপ রেজাল্ট মানে জীবন শেষ নয়, বরং নতুন অধ্যায়ের সূচনা। অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস এবং স্বপ্নকে হাতছাড়া না করে এগিয়ে গেলে সফলতা অবধারিত।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!