কোভিডের নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কের পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত। এডিস ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ে ছড়ানো এই ভাইরাসজনিত রোগ বর্ষা ও গ্রীষ্মকালে প্রতি বছরই ভয়াবহ আকারে দেখা দেয়। ডেঙ্গু মানুষের প্রাণহানির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে, তাই এর লক্ষণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে তীব্র জ্বর (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত), প্রচণ্ড মাথাব্যথা—বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা, হাড় ও পেশিতে যন্ত্রণা (যার কারণে একে ‘ব্রেকবোন ফিভার’ বলা হয়), ত্বকে লালচে দাগ, বমি বমি ভাব বা বমি এবং কখনও নাক বা মাড়ি থেকে রক্তপাত। এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে হতে পারে, আর সম্ভব হলে চিকিৎসকের নির্দেশনায় বাসায় থেকেই সেবা নিতে পারেন।
সাধারণত ডেঙ্গু ৫ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। তবে জটিল অবস্থায় এটি হেমোরেজিক ফিভার বা শক সিনড্রোমে রূপ নিতে পারে, যেখানে রক্তনালি ফেটে যাওয়া, প্লাটিলেট কমে যাওয়া এবং রক্তচাপ হঠাৎ নেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এতে লিভার, কিডনি কিংবা হৃদপিণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই ধরনের মারাত্মক পরিণতি এড়াতে মূল করণীয় হলো মশার বিস্তার রোধ করা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে—যেমন ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র বা নির্মাণাধীন ভবনের পানি জমে থাকা স্থান। তাই আশপাশে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা, পানির ট্যাংক ও বালতি ঢেকে রাখা, ছাদ ও বারান্দা শুকনো রাখা এবং ফুলের টব বা বোতলে পানি জমতে না দেওয়া জরুরি।
মশার কামড় থেকেও সুরক্ষিত থাকতে হবে। দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার, জানালায় নেট লাগানো, সকাল ও সন্ধ্যায় ফুল হাতা জামা পরা এবং মশা তাড়ানোর স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
ডেঙ্গু সন্দেহ হলে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খেতে হবে—যেমন স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি। ব্যথা বা জ্বরের ওষুধ হিসেবে কেবলমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে; কারণ কিছু ব্যথানাশক রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। জ্বর অস্বাভাবিক মনে হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
সবশেষে, সচেতনতাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এটি সাধারণ জ্বর নয়—অবহেলা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই মশার বিস্তার রোধ ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমেই আমরা নিজেদের ও পরিবারকে এই ভয়াবহ রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
আপনার মতামত লিখুন :