ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘিরে উত্তপ্ত সাত কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ঘিরে উত্তপ্ত সাত কলেজ

ছবিঃ সংগৃহীত

রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের প্রস্তাব ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবের বিরোধিতা ও সমর্থনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে।

গত রোববার ঢাকা কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ ঘটনার পর শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে যান এবং প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো সংশোধনসহ বর্তমান প্রশাসকের পদত্যাগের দাবি জানান। অপরদিকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে। ফলে সাত কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রণীত খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ এবং সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজকে একত্র করে “ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি” বা সংক্ষেপে “ডিসিইউ” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির পরিবর্তে এসব কলেজের প্রশাসন, পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা ও শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম সরাসরি ডিসিইউর আওতায় আসবে। প্রতিটি কলেজ সেমি-অটোনোমাস ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় সিনেট ও সিন্ডিকেট থাকবে, যেখানে সাত কলেজের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

তবে খসড়ায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) রাখার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষক সমাজে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও আশঙ্কা করছেন, প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা ঢাকার বাইরে বদলি হতে পারেন।

ঢাকা কলেজের এক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু নাম পরিবর্তন নয়, সঙ্গে আসে নতুন প্রশাসনিক কাঠামো ও স্বায়ত্তশাসন, যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের ভূমিকা কমে যাবে। এতে পুরো ক্যাডারই সংকটে পড়বে।”

ইডেন মহিলা কলেজের এক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকার কারণে আমরা একাডেমিক মান বজায় রাখতে পারি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা না থাকলে তা সমস্যার কারণ হতে পারে।”

সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও ইডেন কলেজের অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, “আমরা চাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান আসুক।”

শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি
শিক্ষার্থীদের মধ্যেও প্রস্তাব নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ঢাকা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের একাংশ মনে করছে, নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেশনজট কমবে এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে। অন্যদিকে ইডেন, বদরুন্নেছা ও বাঙলা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আশঙ্কা করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ হারালে চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মন্ত্রণালয়ের অবস্থান
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে মতামত নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী সোমবার বিকেল ৩টায় মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, প্রস্তাবিত খসড়া বিষয়ে এখন পর্যন্ত ছয় হাজারেরও বেশি মতামত পাওয়া গেছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধীজনদের দেওয়া এসব মতামতের মধ্যে গঠনমূলক পরামর্শের পাশাপাশি কিছু উদ্বেগও উঠে এসেছে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!