আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মামলার প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এক সিরিজ ফোনকল এবং শব্দরেকর্ডের উল্লেখ করে আদালতে দাবি করেন যে, চব্বিশের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন সংক্রান্ত পরিকল্পনা-আলোচনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাসদ সভাপতি (সাবেক মন্ত্রী) হাসানুল হক ইনুর মধ্যে কথোপকথন রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই কল-অডিওর মোট ৬৯টি ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কলরেকর্ড উদ্ধার করা হয়েছে—এগুলোকে মামলা দলিল হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রসিকিউশনের বরাতে আদালতে পাঠানো জবানবন্দিতে মামলার ৫৩ নম্বর সাক্ষী, বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা বলেছেন যে তদন্তে পাওয়া এসব রেকর্ডের ভিত্তিতেই অনেক ঘটনার ক্রমানুসার এবং প্রয়োগযোগ্য ব্যবস্থার উল্লেখ রয়েছে।
শুনানো কথোপকথনের সারমর্ম অনুযায়ী, দুপক্ষের কথাবার্তায় নীচের মূল বিষয়গুলো উঠে আসে —
ঘটনার সময় নির্দিষ্ট এলাকায় (‘রামপুরা’, ‘শনির আখড়া’, ‘নারায়ণগঞ্জ’ ইত্যাদি) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার, নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের এবং স্থানীয় নেতারা ও অংশগ্রহনকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা চালানোর নির্দেশের আলোচনা।
শেখ হাসিনা কথাবার্তায় দাবি করেন যে ইন্টারনেট চালু করতে জটিলতা দেখা দিয়েছে—‘ডাটা সেন্টার পুড়ে গেছে’ এবং নতুন তার খুঁজে জোড়া লাগাতে হবে—এমন কথাও উঠেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে “জীবনে আর ইন্টারনেট সংযোগ দেব না” (অভিযোগিত বক্তব্যের সারমর্ম)। ইনু ইন্টারনেট চালুর প্রয়োজনীয়তার তত্ত্ব দেখিয়ে প্রোপাগান্ডা পরিচালনার প্রস্তাব দেন; অপরদিকে শেখ হাসিনা ইন্টারনেট পুনঃযোগাযোগ না করার তৎপরতায় অনড় নীতির কথা বলেছেন।
কথোপকথনে সামরিক ও আধা-সামরিক কৌশল (হেলিকপ্টার, ওপর থেকে ‘সাউন্ড বোম’ বা অন্যান্য উপায়ে প্রতিক্রিয়া) ও ‘ক্যাসুয়াল্টি’ এড়াতে কিভাবে অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে—এসব কৌশল নিয়েও আলোচনা লক্ষ্য করা যায়।
একইসঙ্গে স্থানীয় স্তরের ‘লিডিং’ কার্যক্রম ও মিছিল-নেতাদের তালিকা প্রস্তুত ও রাতের মধ্যে গ্রেপ্তার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে পরবর্তী মিছিলে তাদের অংশ নেওয়া ঠেকানো যায়। একটি নজির হিসেবে কুষ্টিয়া জেলার স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তথা তালিকা তৈরি করার কথা কথোপকথনে বলা হয়েছে।
কথোপকথনের ভেতর থেকে বোঝা যায় যে একপক্ষ মাঠে কিভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চায়, অপরপক্ষ প্রোপাগাণ্ডার জন্য ইন্টারনেট ফের চালুর ওপর জোর দেন — একেবারে সমর্থনমূলক কণ্ঠস্বরে বিষয়গুলো চর্চিত হয়েছে বলে প্রসিকিউশনের দাবি।
আদালতে দাখিলকৃত জবানবন্দিতে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এসব রেকর্ডের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, এগুলো নির্দিষ্ট ঘটনার সময়কালের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কমিশন করেছে তদন্ত দল। মামলাটির বিশেষ তদন্তকারী তানভীর হাসান জোহা আদালতে বলেন যে উদ্ধার হওয়া কল-রেকর্ড ও অডিও ক্লিপ বিশ্লেষণে ঘটনার নানা দিক স্পষ্ট হয়েছে এবং তা সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আইনি প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া:
এই ধরনের ফোনালাপ ও তার প্রসঙ্গভিত্তিক বিষয়গুলো মামলা ও প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে; তবে বিচারিক পর্যায়ে এসব প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও স্বতঃসিদ্ধতা যাচাই করা হবে। অভিযুক্ত পক্ষ তাঁদের ব্যাখ্যা বা তর্কপূর্বক পাল্টা বক্তব্য দিতে পারেন—এটাই আদালতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রসিকিউশন-পক্ষে সেন্সিটিভ নথি হিসেবে যে অডিও ও কলরেকর্ড দাবি করা হয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের পরই প্রমাণ হিসেবে গুরুত্ব পাবে।
মামলার পটভূমি সংক্ষেপে:
এ মামলায় অভিযোগ অনুযায়ী চব্বিশের জুলাইয়ে সংঘটিত আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী গুরুতর হিংসার আয়োজন ও তা দমন–সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডে উচ্চস্তরের সরকারি ব্যক্তিদের জড়িত থাকার দৃশ্যাবলী তদন্ত করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এই প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি সাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছে; বুধবারের এই শুনানিতে সেই ধারাবাহিকতায় নতুন এ প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হল।
গুরুত্বপূর্ণ নোট: এখানে উপস্থাপিত বিবরণগুলো ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা জবানবন্দি ও প্রসিকিউশনের সংক্ষিপ্ত সারমর্ম—এক নজরে পড়ার সুবিধার্থে তথ্যসমূহ সংকলিত হয়েছে। আদালত, অভিযুক্তদের তর্ক ও তদন্তকারীদের বিশ্লেষণের পরে নিঃসন্দেহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

আপনার মতামত লিখুন :