ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

নতুন পে স্কেল ঘোষণার প্রস্তুতি, ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত সুপারিশ দিতে চায় কমিশন

আমার ক্যাম্পাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৫

নতুন পে স্কেল ঘোষণার প্রস্তুতি, ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত সুপারিশ দিতে চায় কমিশন

ছবিঃ সংগৃহীত

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে দেড় শতাধিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে পে কমিশন। বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতির প্রতিনিধিরা এসব বৈঠকে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার টাকার বেশি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। কমিশন ২০২৬ সালের শুরুতেই নতুন পে স্কেল ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ১৪ আগস্ট প্রথম বৈঠক করে পে কমিশন। এরপর ১ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ নাগরিক, চাকরিজীবী, প্রতিষ্ঠানপ্রধান এবং অ্যাসোসিয়েশন-সমিতির প্রতিনিধিদের মতামত নেয়া হয় অনলাইনে। নির্ধারিত সময়ের কিছুটা বিলম্বে ২০ অক্টোবর থেকে সরাসরি মতবিনিময় শুরু করে কমিশন। এসব সভায় প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাব ও যুক্তি তুলে ধরেন। কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয়, সরকারি রাজস্ব এবং উৎপাদনশীলতা বিবেচনায় রেখে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে।

এ পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি সংগঠন কমিশনের কাছে তাদের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রায় সব সংগঠনই বর্তমান বেতন কাঠামোকে অপ্রতুল বলে মনে করছে এবং বেতন অনুপাত ১:৪ রাখার পাশাপাশি গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে বৈষম্য দূর করার দাবি তুলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি এবং কারিগরি কর্মচারী সমিতি সর্বনিম্ন বেতন ৪০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ ৩৬ হাজার, আর বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশন ও প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি ৩৫ হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ২৫ হাজার টাকাকে সর্বনিম্ন বেতন হিসেবে প্রস্তাব করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজস্ব প্রবাহ, মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক ঋণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সরকারি কর্মচারীদের ক্রয়ক্ষমতা বজায় রাখা হবে অগ্রাধিকার হিসেবে, তবে সরকারের সক্ষমতা বিবেচনায় সুপারিশ তৈরি করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সংগঠনের প্রস্তাবনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অধিকাংশই সর্বনিম্ন বেতন ৩০ হাজার টাকার বেশি করার দাবি জানিয়েছে। নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা এবং বাজারদর বিবেচনায় অনেক সংগঠন বলছে, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার নিচে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি জানায়, শুধুমাত্র খাবারের ব্যয়ই মাসে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য ব্যয় যোগ করলে বর্তমান বেতনে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল আলম জানান, সরকারের সক্ষমতা ও বাজারের ভারসাম্য বিবেচনায় ২৫ হাজার টাকাই বাস্তবসম্মত প্রস্তাব। তার মতে, এতেও অন্যান্য ভাতা যোগ হয়ে সর্বমোট বেতন ৪০ হাজার টাকা ছাড়াবে, যা একটি পরিবারের জন্য ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।

অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠন বলছে, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকার নিচে নির্ধারণ করা হলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারি সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবির বলেন, কর্মকর্তাদের গাড়ি খরচই যেখানে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে কর্মচারীদের বেতন ৩৫ হাজারের কম নির্ধারণ করা অযৌক্তিক। তাদের দাবি, আগামী পাঁচ বছর চলার উপযোগী একটি কাঠামো হতে হবে, যেখানে মর্যাদা ও ন্যায্যতার প্রতিফলন ঘটবে।

এছাড়া প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে ১০ থেকে ১২টি করার, চিকিৎসা ভাতা ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করার, ইনক্রিমেন্টের হার ৭ থেকে ১০ শতাংশ করার এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের প্রস্তাবও এসেছে।

তবে অর্থনৈতিক বাস্তবতা নতুন পে স্কেল প্রণয়নের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে রাজস্ব আদায় বাড়লেও ব্যয়ের চাপও দ্রুত বাড়ছে।

কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে কমিশন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মজীবীদের প্রত্যাশা পূরণের দিকে আমরা এগোচ্ছি, খুব শিগগিরই ফলাফল মিলবে।

কমিশন সূত্র জানায়, ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর অর্থ বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করবে। কমিশনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত হলেও সদস্যরা ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করার আশা করছেন। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, সুপারিশ পাওয়া মাত্রই নতুন পে স্কেল কার্যকর করা হবে, পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নেতারা বলছেন, ২০১৫ সালের কাঠামো অনুযায়ী এখনো বেতন পাওয়া যায়, অথচ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখা কঠিন করে তুলেছে। তারা আশা করছেন, নতুন পে স্কেলে শুধু বেতন বাড়বে না, বরং মর্যাদা ও ন্যায্যতার প্রতিফলন ঘটবে এবং দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান ঘটবে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!