এক সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (জাসদ) এখন ধারাবাহিক ব্যর্থতায় কোণঠাসা। সম্প্রতি ডাকসু, জাকসু, চাকসু ও রাকসুর নির্বাচনে টানা ভরাডুবির পর সংগঠনটির এই দুরবস্থা নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রসংসদে এই ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের আগে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে এবং তরুণ ভোটারদের মধ্যে ছাত্রদলের প্রভাব ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে চলছে গভীর বিশ্লেষণ। নেতৃত্বে অছাত্রদের আধিপত্য, বয়সজনিত সীমাবদ্ধতা, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংগঠনের ওপর কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক নেতাদের অতিরিক্ত প্রভাব—এসবকেই দায়ী করা হচ্ছে ব্যর্থতার পেছনে। বিএনপির হাইকমান্ড খুব শিগগিরই ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব আনার চিন্তাভাবনা করছে।
২০২৪ সালের মার্চে রাকিবুল ইসলাম রাকিব সভাপতি ও নাছির উদ্দিন নাছিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকেই সংগঠনের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। পদবঞ্চিত ও পদপ্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে নয়া পল্টনে একাধিকবার বিক্ষোভ করেছে, এমনকি ‘কাফন মিছিল’ও করেছে।
ছাত্রদলের ভেতরে অভিযোগ, বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল সংগঠনটিকে নিজের বলয়ে বেঁধে রেখেছেন। নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বজনপ্রীতি ও গ্রুপিংয়ের কারণে যোগ্য ছাত্রনেতারা উপেক্ষিত হচ্ছেন। ফলাফল—ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ছাত্রদলের নেতৃত্বে তরুণদের অংশগ্রহণ না থাকায় সংগঠনটি ছাত্রসমাজের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে। ঢাবি, জাবি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সক্রিয় উপস্থিতি নেই, যা আন্দোলন ও নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ছাত্রদলের একাধিক নেতা বলেন, “বর্তমান নেতৃত্ব ছাত্রদের মন বুঝতে পারছে না। বয়সের ভারে তারা মাঠে নেই, বরং সংগঠনের প্রাণশক্তি কমিয়ে দিয়েছে।”
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা মনে করছেন, ছাত্রদলের এই ব্যর্থতা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। ঢাবি, জাকসু, চাকসু ও রাকসু নির্বাচনে পরাজয় স্পষ্ট করেছে যে, তরুণ প্রজন্মের কাছে সংগঠনটি আর আকর্ষণীয় নয়।
বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, “যোগ্যতা নেই বলেই ছাত্রদল হেরেছে। সংগঠনের মধ্যে যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের ছাত্ররাজনীতির মাঠের বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত বলেন, “চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে টানা ব্যর্থতা ইঙ্গিত দেয়—ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছে। কেন হারিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি।”
সব মিলিয়ে, বিএনপির হাইকমান্ড এখন ছাত্রদলের সংস্কার ও পুনর্গঠনের দিকে নজর দিচ্ছে। খুব শিগগিরই বর্তমান কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :