ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

সরকারকে চাপে রাখতে এনসিপি নেতাদের ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যু: বিশ্লেষকদের অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫

সরকারকে চাপে রাখতে এনসিপি নেতাদের ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যু: বিশ্লেষকদের অভিমত

ছবিঃ আমার ক্যাম্পাস

রাজনীতির অঙ্গনে ফের আলোচনায় এসেছে ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ। অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা এই ইস্যু সামনে এনেছেন বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, সরকারের প্রতি ছাত্রনেতাদের মধ্যে কোনো ধরনের ক্ষোভ বা অবিশ্বাস তৈরি হয়ে থাকলেও, সরকারের ভেতর থেকে কে ‘সেফ এক্সিট’ চায়— তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথমবার ‘সেফ এক্সিট’ শব্দটি আলোচনায় আসে ২০০৮ সালের শেষ দিকে। তৎকালীন এক-এগারো সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদ ও সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমদ যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলে এ শব্দের প্রচলন ঘটে। অভিযোগ ওঠে, তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল।

প্রায় ১৭ বছর পর, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় আবারও ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ সামনে এনেছেন এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম— যিনি সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম মুখ।

রাজনীতি বিশ্লেষক ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন, “নাহিদ ইসলামের বক্তব্য হয়তো ক্ষোভের প্রকাশ। হয়তো তাদের ধারণা, এই সরকার শেষ পর্যন্ত তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে না। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক হতাশার বহিঃপ্রকাশও হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার শেষ হলে অনেকে হয়তো দেশ ছাড়তে পারেন— এমনকি প্রধান উপদেষ্টাও। কিন্তু এটাকে ‘সেফ এক্সিট’ বলা যায় না।”

এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় সংগঠক সারজিস আলমও এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারকে চাপের মুখে ফেলতেই এনসিপি নেতারা ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যুটি সামনে আনছেন।

বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “৫ আগস্টের আন্দোলনের মূল শক্তিরাই এখন রাজনীতির স্টেকহোল্ডার। মাঠে টিকে থাকতে তারা নানান ইস্যু ব্যবহার করছে। এটি তারই অংশ।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, তাকে এখনই বিচারের আওতায় আনা উচিত। কোনো অপরাধীকে রক্ষা করার জন্য এই সরকার গঠিত হয়নি। ‘সেফ এক্সিট’ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

অন্যদিকে ড. সাব্বীর আহমেদ মনে করেন, “সত্যিই যদি কোনো ‘সেফ এক্সিট’-এর প্রক্রিয়া চলে, তবে সেটি তদন্তের মাধ্যমে বের করা দরকার। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র-জনতা ও সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। তাদের মতে, এমন মন্তব্য উপদেষ্টাদের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং জাতীয় ঐক্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!