ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

এনসিপিকে ভোটের মাঠে সঙ্গে পেতে চায় বিএনপি

আমার ক্যাম্পাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫

এনসিপিকে ভোটের মাঠে সঙ্গে পেতে চায় বিএনপি

ছবিঃ সংগৃহীত

জোটে যোগ না হলেও নির্বাচনী সমঝোতা চায় উভয় পক্ষ, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে তৎপরতা বেড়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে ভোটের মাঠে সঙ্গে পেতে চায় বিএনপি। দুই দলের আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন উভয় পক্ষের নেতারা। তবে বিএনপির মূল লক্ষ্য— নতুন এ দলটিকে অন্তত জামায়াত থেকে দূরে রাখা।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীও এনসিপির সঙ্গে নির্বাচনকালীন সমঝোতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এনসিপি নেতারা জানিয়েছেন, জামায়াত তাদের ‘ডানপন্থি’ তকমা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। একইসঙ্গে বিএনপিও প্রত্যাশিত আসন ছাড়তে অনীহা দেখাচ্ছে, ফলে দলটি এখন কৌশলগত ভারসাম্যে চলছে।


বিএনপি-জামায়াত দুই দিকেই যোগাযোগ

এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টা এনসিপি–বিএনপি নির্বাচনী ঐক্য গঠনের ব্যাপারে আগ্রহী। ঐক্য না হলে অন্তত একজন উপদেষ্টা বিএনপির প্রতীকে ঢাকা আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, উপদেষ্টারাই এনসিপির সঙ্গে জোট গঠনে প্রধান বাধা। তাদের কারণে আগের কয়েক দফা আলোচনাতেও এনসিপি জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়নি।


বিএনপি নেতাদের বক্তব্য

সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “আমরা অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনের তরুণদের গড়া নতুন দলও রয়েছে।”

এই বক্তব্যের পরই এনসিপিকে নিয়ে নির্বাচনী সমঝোতার গুঞ্জন জোরালো হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এনসিপিও তার অংশ। তবে এখনো নির্বাচনী আসন বণ্টন বা জোটের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”

বিএনপি নেতাদের মতে, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এনসিপিকে জামায়াতের হাত থেকে দূরে রাখা।


এনসিপির অবস্থান

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তবে জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
একজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক হলেও নাহিদ ইসলাম বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পরবর্তীতে আলোচনা করেছেন। আমরা অন্তত ৫০-৬০ আসনে ছাড় পেলে জোটে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করব।”

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনও জানিয়েছেন, এখনো কোনো দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোটের সিদ্ধান্ত হয়নি।


জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলই একসঙ্গে আন্দোলন করতে পারে, এমনকি নির্বাচনী সমঝোতাও সম্ভব।”

তবে জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, এনসিপির ভোটশক্তি প্রায় ৩-৪ শতাংশের বেশি নয়। “তবু জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগ কাজে লাগাতে এনসিপিকে কাছে চায় জামায়াত,” বলেন তিনি।


বিএনপিতে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর’ আশঙ্কা

এনসিপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, আসন ছাড় পেলেও মাঠে বিএনপির স্থানীয় নেতারা তাদের পক্ষে কাজ করবেন কিনা, তা অনিশ্চিত। কারণ নতুন নির্বাচনী আইনে এক দলের প্রার্থী অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। ফলে এনসিপিকে নিজস্ব প্রতীকে লড়তে হবে, যা মাঠে টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে।

একজন বিএনপি নেতা বলেন, “যেখানে ধানের শীষ থাকবে না, সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঠেকানো কঠিন।”


জামায়াতের সঙ্গে ‘ট্যাগের ভয়’

এনসিপির ভেতর থেকেই অনেকে মনে করেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে সহজেই আসন পাওয়া যাবে, কিন্তু এতে ‘ডানপন্থি ট্যাগ’ লাগবে।
দলের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সম্প্রতি ফেসবুকে লেখেন, “মওদুদীবাদী দলগুলো ইতোমধ্যে অনেক আছে, আরেকটি বাড়লে নতুন কিছু তৈরি হবে না।”

এনসিপির একাংশের দাবি— জামায়াতের সঙ্গে গেলে সংগঠন ও অর্থের ঘাটতি মেটানো সম্ভব, কিন্তু দলীয় স্বকীয়তা হারানোর ঝুঁকি বড়।


‘নাহিদকে নেতা মানবে না জামায়াত’

জামায়াত ও এনসিপি উভয় পক্ষই জানিয়েছে, জোট হলে নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বে রাখার প্রস্তাব এসেছিল, যেমন ২০১৮ সালে বিএনপি জোটে ছিলেন ড. কামাল হোসেন। কিন্তু জামায়াত সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

জামায়াতের সূত্র জানায়, “আমরা নেতৃত্ব হাতছাড়া করতে চাই না। এনসিপি চায়লে সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু জোটের নেতৃত্ব নয়।”


এনসিপিকে ঘিরে রাজনৈতিক হিসাব

গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় শরিক দল—জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি—২০১৯ সাল থেকে বিএনপির সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
এই দলগুলোর মতোই এনসিপিও এখন জুলাই জাতীয় সনদের প্রশ্নে বিএনপির কাছাকাছি।

এক সংস্কার সংলাপের অংশগ্রহণকারী বলেন, “বিএনপি এখন ছোট দলগুলোকে আসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামায়াতকে একঘরে করার কৌশল নিয়েছে।”


হেফাজত ও ইসলামী দলের প্রভাব

জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে মাওলানা মামুনুল হক নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত আন্দোলন। এই দুটি দল এনসিপির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ।
সূত্র জানায়, এনসিপি এই দুটি দলসহ এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে আলাদা একটি জোট করার চেষ্টা করছে। এতে বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টনের আলোচনায় তারা শক্ত অবস্থান নিতে পারবে।

হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালী নেতারা জামায়াতবিরোধী অবস্থানে থাকায় বিএনপি ও এনসিপি উভয়ই তাদের সমর্থন পেতে আগ্রহী।



আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপিকে ঘিরে বিএনপি ও জামায়াত উভয়েরই রাজনৈতিক কৌশল জোরদার হয়েছে। বিএনপির লক্ষ্য দলটিকে পাশে রাখা, আর জামায়াতের লক্ষ্য তাদের ভোটের আবেগ কাজে লাগানো। তবে এনসিপি আপাতত দুই দিকের মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে নির্বাচনী লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!