বিদ্যা বালানের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল ‘পরিণীতা’। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছিলেন প্রদীপ সরকার। এ সিনেমা দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল বিদ্যার। প্রথম কাজ দিয়েই হিন্দি সিনেমায় পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে এ কাজ সহজে আসেনি বিদ্যার কাছে। ৭৫ বার অডিশন দিয়ে তবেই এ সিনেমার ললিতা চরিত্রে চূড়ান্ত হন।
পরিণীতা সিনেমার গল্প বলার আগে বিদ্যার ক্যারিয়ারের জার্নি খানিকটা বলা প্রয়োজন। ‘হাম পাঁচ’ সিরিয়াল দিয়ে অভিনয় শুরু হয় বিদ্যার। এ সিরিয়াল যখন চলছিল, তখন তিনি কলেজের ছাত্রী। শুটিংয়ের কারণে নিয়মিত ক্লাস করতে পারছিলেন না। দেড় বছর এতে কাজ করার পর বাধ্য হয়ে সিরিয়ালটি ছেড়ে দেন। এরপর শুরু হয় তাঁর মডেলিং অধ্যায়। একে একে ৯০টি বিজ্ঞাপনে মডেল হন।
বিজ্ঞাপনের সুবাদে বিদ্যার কাছে সিনেমায় অভিনয়ের অফার আসতে থাকে। মোহনলালের বিপরীতে একটি মালয়ালম সিনেমায় সুযোগ পান। কিন্তু কয়েক দিন শুটিংয়ের পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যা বালান জানান, ওই সময় ১২টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে একে একে সব সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। অনেকেই তখন বিদ্যাকে ‘অপয়া’ বলে ডাকত। ভেতরে-ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছিলেন বিদ্যা। তবুও মনে আশা পুষে রেখেছিলেন, একদিন কিছু একটা হবে। চিম্বুরের এক মন্দিরে রোজ গিয়ে বসে থাকতেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাঁদতেন।
বিদ্যা যখন নিয়মিত মডেলিং করতেন, তখন কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেন প্রদীপ সরকারের নির্দেশনায়। কয়েক বছর পর ইউফোরিয়া ব্যান্ডের একটি মিউজিক ভিডিওর জন্য বিদ্যাকে আবারও ডেকে নেন প্রদীপ। প্রথম দিন কাজ করার পর বিদ্যাকে তিনি জানান, নিজের প্রথম সিনেমাটি তাঁকে নিয়েই বানাবেন। এর মধ্যে গৌতম হালদারের ‘ভালো থেকো’ নামের একটি বাংলা সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হয় বিদ্যা বালানের।
ওদিকে, পরিণীতা সিনেমার জন্য প্রযোজক পেয়ে যান প্রদীপ সরকার। বিধু বিনোদ চোপড়া সিনেমাটি প্রযোজনা করতে রাজি হন। তবে শর্ত ছিল, ললিতা চরিত্রে ঐশ্বরিয়াকে নিতে হবে। কারণ, বিদ্যার মতো নতুন শিল্পীকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি তিনি। তবে প্রদীপ সরকার অনড় ছিলেন, এ চরিত্রে বিদ্যাই উপযুক্ত। প্রযোজককে বোঝাতে থাকেন। সিদ্ধান্ত হয়, অডিশনে ভালো করলে তবেই সুযোগ দেওয়া হবে বিদ্যাকে।
শুরু হয় বিদ্যার অডিশন পর্ব। কখনো ফটোশুট, কখনো কোনো দৃশ্য, কোনো মুহূর্ত, কখনো গানের দৃশ্যের অডিশন চলতে থাকে। এ সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন শান্তনু মৈত্র। তিনি জানান, পরিণীতা সিনেমার জন্য ৭৫ বার অডিশন দিতে হয়েছে বিদ্যা বালানকে। প্রতিবারই রিজেক্ট করছিলেন বিধু বিনোদ চোপড়া। কিন্তু বিদ্যা হাল ছাড়েননি। যতবারই তাঁকে অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছে, তিনি সময়মতো গিয়ে হাজির হয়েছেন।
অবশেষে একদিন আসে সেই কাঙ্ক্ষিত সময়। বিদ্যা বালান সেদিন স্প্যানিশ শিল্পী এনরিকোর কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলেন। কনসার্টের মাঝেই বিধু বিনোদ চোপড়া ফোন করে জানান, পরিণীতা সিনেমায় বিদ্যাই চূড়ান্ত! কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বিদ্যা বালান। শুরু হয় তাঁর বলিউড অধ্যায়। ২০০৫ সালের ১০ জুন মুক্তি পায় পরিণীতা। প্রথম সিনেমাতেই প্রশংসিত হন বিদ্যা।
পরিণীতা দিয়ে যে সাফল্যের শুরু হয়েছিল, দুই দশক ধরে বিদ্যার জীবনে সে সাফল্য আরও বহুগুণ ধরা দিয়েছে প্রতিটি সিনেমায়। ‘গুরু’, ‘হেই বেবি’, ‘ভুল ভুলাইয়া’, ‘পা’, ‘ইশকিয়া’, ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘কাহানি’, ‘শকুন্তলা দেবী’সহ অনেক আলোচিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন বিদ্যা, কিন্তু পরিণীতার কথা কখনো মুছে যায়নি তাঁর মন থেকে।
এ বছর পরিণীতার ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। দুই দশক উপলক্ষে আবারও ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। রি-রিলিজ উপলক্ষে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এসে নিজের ক্যারিয়ারের জার্নি আবারও ফিরে দেখলেন বিদ্যা। বললেন, ‘আমার জীবনে একটাই স্বপ্ন ছিল। অভিনয়। গত দুই দশক ধরে সেই স্বপ্নের রাজ্যে আমি বাস করতে পারছি। তার পেছনে একটাই কারণ—পরিণীতা’।
আপনার মতামত লিখুন :