ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আনিম ভূইয়া মোনামী তার ছবি এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর মন্তব্য করার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকেও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার শাহবাগ থানায় তিনি এ মামলা দায়ের করেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খালিদ মুনসুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেহরীন আনিম ভূইয়া মোনামী তার ছবি বিকৃত করে প্রকাশ এবং অশালীন মন্তব্যের অভিযোগে মামলা করেছেন। আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তদন্ত ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম আসামি হিসেবে সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট মুজতবা খন্দকারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মোনামীর ছবি বিকৃত করে প্রকাশ করেন এবং তাতে অশালীন ক্যাপশন যোগ করেন। পোস্টের স্ক্রিনশট ও আইডি লিংক মামলার নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট মহিউদ্দিন মোহাম্মদকে। অভিযোগ করা হয়, তিনি তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে মোনামী সম্পর্কে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন এবং তাকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেন।
তৃতীয় আসামি হিসেবে নাম এসেছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নিরব হোসাইনের। অভিযোগ অনুযায়ী, একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পোস্টের মন্তব্য অংশে তিনি মোনামীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
চতুর্থ আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আশফাক হোসাইন ইভানের নাম, যিনি নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মোনামীর এডিট করা ছবি পোস্ট করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া মামলায় বলা হয়, অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও কয়েকজন ব্যক্তি ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে মোনামীর ছবি বিকৃত করে প্রকাশ করছেন এবং তাকে নিয়ে অশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য করছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব পোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে অবস্থানকালে তিনি দেখতে পান।
এ ঘটনায় মনঃক্ষুণ্ণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মোনামী বলেছেন, তার ছবি বিকৃত করে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এ ধরনের মন্তব্যের কারণে তিনি চরম মানসিক চাপে রয়েছেন। তিনি জানান, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তিনি সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী পেশাজীবীদের ব্যক্তিগত ছবি বিকৃত করে প্রকাশ, ট্রল ও অপমানজনক মন্তব্য বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগ তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন আচরণের এই ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই একে অনলাইন হয়রানি ও চরিত্র হননের গুরুতর উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।
মোনামীর করা মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ডিজিটাল উপায়ে সংগৃহীত প্রমাণ পর্যালোচনা করে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্ত কেউ এ ঘটনায় এখনও প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

আপনার মতামত লিখুন :