ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে দৃশ্যমানভাবে মাঠে শিবির

আমার ক্যাম্পাস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে দৃশ্যমানভাবে মাঠে শিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে কোনো নির্বাচনী লড়াইয়ে সংগঠনটির অংশগ্রহণ এবারই প্রথম নয়, তবে এবারের সক্রিয়তা ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন অনেকে। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি প্যানেল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে শিবির। এই প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম। প্রশাসনিক পক্ষপাতের অভিযোগ এবং সংখ্যালঘু ও নারী ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা—এই দুই চ্যালেঞ্জই শিবিরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

জুলাইয়ের আন্দোলন থেকে নির্বাচনের ময়দান

২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় থেকেই ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয়ে ওঠে শিবির। সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে সাদিক কায়েমের নাম সামনে আসে সে সময়ই। তখন থেকেই তাঁর নেতৃত্বগুণ ও সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এখন সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে ডাকসু নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায় শিবির।

শিবির নেতারা বলছেন, সাদিক কায়েমের পরিচিতি, গ্রহণযোগ্যতা এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের দক্ষতাই তাকে প্যানেলের মুখ করে তোলার মূল কারণ। এছাড়া গত এক বছরে তার বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি।

হল ও বিভাগে প্রচারে সক্রিয়তা

শুধু অনলাইনেই নয়, শিবিরের প্রার্থীরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে প্রতিনিয়ত পোস্ট করা হচ্ছে প্রচারণার ছবি ও ভিডিও। এসব প্রচারে সাদিক কায়েমের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে। ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীদের কার্যক্রমও তুলে ধরছে এই পেজ।

ছাত্রী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের টার্গেট

ডাকসুর এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশই ছাত্রী। সংখ্যায় এটি প্রায় ১৯ হাজার। ফলে ছাত্রী ভোট একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। তবে শিবিরের অংশগ্রহণ নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। কেউ কেউ মনে করেন, শিবির নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে নারীদের স্বাধীন চলাফেরায় বিধিনিষেধ আসতে পারে।

এই ধারণা ভাঙতেই নির্বাচনী ইশতেহারে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে শিবিরের প্যানেল। এর মধ্যে রয়েছে—নিরাপদ পরিবহন, হল প্রবেশে বিধিনিষেধ শিথিল, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ফ্রি মেন্সট্রুয়াল হাইজিন পণ্য, আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি, নারী কর্মী নিয়োগ, ব্রেস্ট ফিডিং রুম ও চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন।

সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের দিক থেকেও কিছুটা চ্যালেঞ্জে আছে শিবির। জগন্নাথ হলের প্রায় ২ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এখানে শিবিরের প্রভাব তুলনামূলক কম বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে সংগঠনের নেতারা বলছেন, তাদের প্যানেলে চাকমা সম্প্রদায়ের এক শিক্ষার্থীসহ মোট চারজন নারী প্রার্থী আছেন, যা তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাবমূর্তি তৈরি করছে।

‘সমান সুযোগ চাই’ দাবি শিবির প্রার্থীদের

নির্বাচনী প্রচারের বিভিন্ন পর্যায়ে শিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনের প্রতি পক্ষপাত করছে। শিবিরপন্থী নারী প্রার্থীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।

জিএস পদপ্রার্থী ও সংগঠনের শাখা সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমাদের প্যানেলের মূল শক্তি হলো অন্তর্ভুক্তি। মুসলিম-অমুসলিম, বাঙালি-অবাঙালি, হিজাবি-নন হিজাবি, এমনকি শিবিরের সমর্থক ও সমালোচক—সবাই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’

এজিএস প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসনও নিরপেক্ষ অবস্থানে নেই।’

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!