চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নবনির্মিত ছাত্রাবাস মুক্তিযোদ্ধা হলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ জুন সিট বরাদ্দ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর জুলাই মাস থেকে শিক্ষার্থীরা নবনির্মিত এ হলে উঠতে শুরু করেন। তবে হল চালু হওয়ার দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো চালু হয়নি ডাইনিং ব্যবস্থা। নেই বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ, দেওয়া হয়নি ইন্টারনেট সংযোগ। নাস্তার জন্য শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হচ্ছে অন্য হলগুলোর ক্যান্টিনের উপর। পাশাপাশি, সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় নিরাপত্তা নিয়েও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা হলে অবস্থান করলেও মৌলিক সুবিধার ঘাটতিতে তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ আহামেদ বলেন, বর্তমানে পানির জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে, বিশেষ করে আবহাওয়া খারাপ থাকলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। হঠাৎ করে পানি প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা করাও বেশ কঠিন। এছাড়া, হলের ক্যান্টিন চালু না থাকায় নাস্তার জন্য অন্য হলে যেতে হচ্ছে, যা আমাদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যান্য অসুবিধাগুলো কোনোভাবে ম্যানেজ করা গেলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং ক্যান্টিনের অনুপস্থিতি আমাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে।
এছাড়াও তড়িৎ ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এম এ সাঈদ জানান, হলে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায়, আমাদের ব্যক্তিগতভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পাশাপাশি, হলে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় নিরাপত্তার দিকটি নিয়েও চিন্তা করা লাগে। আমরা আশা করি, প্রশাসন দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এসব সমস্যার পাশাপাশি হলের অনেক কক্ষে খাট, চেয়ার, টেবিলের মতো মৌলিক আসবাবপত্রেরও ঘাটতি রয়েছে। পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌম্যজ্যোতি রায় রোহিত বলেন, অন্যান্য সমস্যাগুলোর পাশাপাশি আমাদের রুমে এখনো খাট, টেবিলের মতো প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়নি। এজন্য পড়াশোনা করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। রিডিং রুমেও ঠিকমতো বসার জায়গা পাওয়া যায় না।
এসব সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. বিপুল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, নতুন হল হিসেবে এখানে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। আশা করি, এক দেড়মাসের মধ্যেই ডাইনিং চালু হবে। ডাইনিং এর আগেই আমরা চেষ্টা করছি সিসিটিভি স্থাপন করার। কারণ এই হলের নিরাপত্তাটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য হলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো মানের পানি সরবারহের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই সেবা দৃশ্যমান হবে। ওয়াইফাই এর জন্য আমাদের হল বিডিরেন এর তালিকাভূক্ত হয় নাই। সেজন্য অন্যান্য হলের মত আমাদের হলে এই সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। হলের দশটি জায়গায় ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা করা হয়েছে যদিও তা যথেষ্ঠ নয়। তবে এর কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী খাট এবং টেবিল পর্যাপ্ত ছিল না। মাত্র ৪৮ টি খাট ছিল। আশা করি দেড়-দুমাসের মধ্যেই ২৩ ব্যাচ পর্যন্ত সবার রুমে খাট দিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। প্রশাসন সব সমস্যা মাথায় রেখেই দ্রুততম সময়ে সমাধানের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হলে শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিনটি সেবার ক্ষেত্রে অক্ষমতার কথা জানিয়েছিল। সেগুলো হলো, ডাইনিং ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সংযোগ ও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ। তবে ২০২০ সালে শুরু হওয়া হল নির্মাণকাজ এখনো সম্পন্ন না হওয়া এবং দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও মৌলিক সুবিধা চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে দ্রুততম সময়ে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :