প্রস্টেট ক্যানসার চিকিৎসায় এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে দুইটি নতুন ওষুধ—এনজালুটামাইড ও লিউপ্রোলাইড। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ দু’টির সমন্বিত প্রয়োগ প্রস্টেট ক্যানসারে মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সাময়িকী নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ।
গবেষণায় জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ইতিমধ্যে ওষুধ দু’টির ব্যবহার অনুমোদন দিয়েছে। তিন ধাপে পরিচালিত এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন এক হাজারেরও বেশি প্রস্টেট ক্যানসার–ঝুঁকিপূর্ণ রোগী। অংশগ্রহণকারীদের তিনটি দলে ভাগ করা হয়—এক দলকে দেওয়া হয় শুধু এনজালুটামাইড, অন্য দলকে লিউপ্রোলাইড, আর তৃতীয় দলকে দেওয়া হয় দুটি ওষুধের সংমিশ্রণ।
ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁরা একসঙ্গে দুই ওষুধ গ্রহণ করেছেন, তাঁদের প্রস্টেট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এতে মৃত্যুঝুঁকি গড়ে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
গবেষণায় আরও বলা হয়, এনজালুটামাইড শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। অপরদিকে লিউপ্রোলাইড হরমোন থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়, যা হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টিউমার গঠনের ঝুঁকি কমায়। একসঙ্গে ব্যবহার করলে দুই ওষুধের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ৪০ বছরের পর থেকে নিয়মিত আলট্রাসোনোগ্রাফি (ইউএসজি), পিএসএ টেস্ট এবং হিস্টোপ্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে প্রস্টেট গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা ও ক্যানসারের উপস্থিতি আগে থেকেই শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসকেরা আরও সতর্ক করেছেন, প্রস্রাবে জ্বালা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ বা রাতে বারবার প্রস্রাবের চাপ—এসব উপসর্গকে অবহেলা না করার জন্য। অনেক সময় এই সাধারণ উপসর্গগুলোই প্রস্টেট ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
গবেষকেরা মনে করছেন, এনজালুটামাইড ও লিউপ্রোলাইডের সফল প্রয়োগ প্রস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন আশার দুয়ার খুলে দেবে এবং ভবিষ্যতে মৃত্যুহার কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :