ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ডাকসু নির্বাচন

ডাকসুতে ভিপি-জিএস পদে ইতিহাস: কারা হচ্ছেন এবারের উত্তরসূরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫

ডাকসুতে ভিপি-জিএস পদে ইতিহাস: কারা হচ্ছেন এবারের উত্তরসূরী

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) দীর্ঘকাল ধরে দেশের শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। প্রায় পাঁচ বছর পর আবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে ২৮টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। এছাড়া ১৮টি হলে ১৩টি করে পদে মোট ১ হাজার ৩৫ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরই ১৯২২ সালের ডিসেম্বরে কার্জন হলে শিক্ষকদের এক সভায় ১৯২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নির্বাহী পরিষদ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়। ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর সংসদের সাধারণ সভায় খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়।

প্রথম ডাকসুতে ১৯২৪-২৫ সালে ভিপি হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং জিএস বা সম্পাদক হন যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। পরের বছরেও মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৭-২৮ শিক্ষাবর্ষে ভিপি পদে কোনও নাম পাওয়া যায়নি, তবে জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বি কে অধিকারী। ১৯২৮-২৯ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন এ এম আজহারুল ইসলাম এবং জিএস এস চক্রবর্তী। ১৯২৯-৩০ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন রমণীকান্ত ভট্টাচার্য এবং জিএস হিসেবে কাজী রহমত আলী ও আতাউর রহমান খান দায়িত্ব পালন করেন। আতাউর রহমান খান পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের পঞ্চম মুখ্যমন্ত্রী এবং পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৩২ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত ভিপি পদে নাম পাওয়া যায়নি। এই সময় গৃহীত হয়েছিল জিএসদের মধ্যে ভবেশ চক্রবর্তী, এ এইচ এম এ কাদের, আব্দুল আওয়াল খান ও আব্দুর রহিমের নেতৃত্ব। ১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে নির্বাচিত ডাকসুর প্রথম ভিপি ছিলেন আহমেদুল কবির। তিনি পরবর্তীতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন।

১৯৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন ফরিদ আহমদ। আহমেদুল কবির ও ফরিদ আহমদ জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুধীর দত্ত। ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন অরবিন্দ বসু এবং জিএস গোলাম আযম।

১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডাকসুর নাম হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। প্রথম নির্বাচিত ভিপি হন এ এস বারী। তিনি পরবর্তীতে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন।

১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন নিরোদ বিহারী নাগ এবং জিএস আব্দুর রব চৌধুরী। পরবর্তী কয়েক বছরে একরামুল হক, বদরুল আলম, আবুল হোসেন, আমিনুল ইসলাম তুলা, জাহানারা আখতার, এস এম রফিকুল হক, শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ, রাশেদ খান মেনন, বোরহান উদ্দীন, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, মাহফুজা খানম, তোফায়েল আহমেদ ও নাজিম কামরান চৌধুরী সহ আরও অনেক নেতারা ভিপি ও জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্বাধীনতার পর প্রথম নারী ভিপি হন মাহফুজা খানম এবং প্রথম নারী জিএস হন মতিয়া চৌধুরী। স্বাধীনতার পর ডাকসুতে প্রথম ভিপি হন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম; জিএস ছিলেন মাহবুব জামান। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়নি। ১৯৭৯-৮১ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং জিএস আখতারুজ্জামান। ১৯৮২-৮৩ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন আখতারুজ্জামান, জিএস জিয়াউদ্দিন আহমেদ (বাবলু)। ১৯৮৯-৯১ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, জিএস মুশতাক হোসেন।

২০০৫, ২০১২ ও ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই ঘটে। শেষ নির্বাচনে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন নুরুল হক নুর এবং জিএস হন গোলাম রাব্বানী। স্বাধীনতার পর থেকে ডাকসু নির্বাচনে অনেক সময় অনীহা থাকায় ১৯৭১ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে নির্ধারিত ১৯টি নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৭টি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে প্রধান আলোচ্য তিনটি প্যানেল হচ্ছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাগছাস। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরাও নির্বাচনী মঞ্চে উপস্থিত। শিক্ষার্থীরা এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আগামী ডাকসু নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!