আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে বিএনপি। দলটি এর আগে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা থেকেও সরে এসেছে।
রবিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সংলাপের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এখন ফাইনাল পর্যায়ে। আমরা মোটা দাগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে এগোতে পেরেছি।”
এর আগে সংলাপে তিনি মত দেন, সংবিধানে কোনো সংশোধন না করেও “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অধ্যাদেশ” জারি করে নির্বাচন কমিশনকে গণভোট আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব। তাঁর যুক্তি, সংবিধানে কোথাও বলা হয়নি যে জাতীয় ইস্যুতে গণভোট করা যাবে না।
সালাহউদ্দিন বলেন, “গণভোটের মাধ্যমে জনগণ জুলাই সনদ অনুমোদন করলে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবে পরবর্তী সংসদ। তখন সেই সংসদ সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের ক্ষমতা (কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার) অর্জন করবে।” তিনি আরও জানান, “গণভোটে সনদ অনুমোদিত হলে সংসদ তা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে, এবং পরবর্তীতে ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য আবারও গণভোট হতে পারে।”
তবে এ প্রস্তাব নিয়ে জামায়াতে ইসলামী প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শিশির মনির প্রশ্ন তোলেন— “জুলাই সনদে তো সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের বিষয় রয়েছে, তাহলে ১৪২ অনুচ্ছেদ স্পর্শ না করে কীভাবে সেই সংস্কার হবে?”
এর জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গণভোটে সরাসরি সংবিধান পরিবর্তন হবে না, বরং সংস্কারের জন্য একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে, যা আগামী সংসদ বাস্তবায়ন করবে।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, “গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম মতামত প্রকাশ পাবে। জনগণ জুলাই সনদ অনুমোদন করলে, সেটি আর আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে না। নতুন সংসদ তখন সাধারণ সংসদের মতো নয়, বরং সনদ বাস্তবায়ন ও সংবিধান সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সংসদ হিসেবে কাজ করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেন, “গণভোটের মাধ্যমে প্রাপ্ত জনরায়ই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেই দলেরই হোক না কেন, সেই রায় মানতে সব সদস্য বাধ্য থাকবেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “সংসদ সব সময় সার্বভৌম, কিন্তু গণরায় উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। জুলাই সনদ নিয়ে জনগণের মতামতই হবে চূড়ান্ত পথনির্দেশ।”
জুলাই সনদের ভেতরে যেসব সংস্কার বিষয়ে মতভেদ বা নোট অব ডিসেন্ট থাকতে পারে, সে প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “সব দল সনদে স্বাক্ষর করবে, জনগণ জানবে এতে কী আছে। এরপর যাদের ম্যান্ডেট থাকবে, তারা নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী মত প্রকাশ করতে পারবে, তবে মূল সনদের প্রতি সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।”
সাংবিধানিক সংস্কার নির্বাচনের আগে না করে গণভোটের মাধ্যমে করতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সংসদের বাইরে এমন কোনো ফোরাম নেই যেখানে এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব। তাই জনগণের সার্বভৌম মতামতের মাধ্যমেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।”

আপনার মতামত লিখুন :