ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

নিখোঁজের নাটক ফাঁস, ইমাম মহিবুল্লাহর স্বীকারোক্তিতে চমক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫

নিখোঁজের নাটক ফাঁস, ইমাম মহিবুল্লাহর স্বীকারোক্তিতে চমক

ছবিঃ সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গী টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর রহস্যজনক নিখোঁজের পেছনের আসল ঘটনা অবশেষে প্রকাশ পেয়েছে। চার দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর জানা গেছে, তিনি অপহৃত হননি—স্বেচ্ছায় টঙ্গী থেকে পঞ্চগড় গিয়েছিলেন। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) এক কর্মকর্তা জানান, তদন্তে দেখা গেছে—ইমাম মহিবুল্লাহর নিখোঁজের ঘটনাকে অপহরণ হিসেবে দেখানো হলেও সেটি ভিত্তিহীন। তিনি নিজেই শ্যামলী পরিবহনের বাসে টিকিট কেটে পঞ্চগড় গিয়েছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান ও চলাচলের তথ্য ট্র্যাক করে বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। এ ঘটনায় একই বাসে থাকা যাত্রী ও সুপারভাইজারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদে মুফতি মহিবুল্লাহ স্বীকার করেছেন, পুরো ঘটনাই ছিল তার নিজ সিদ্ধান্তের ফল। তিনি বলেন, “আমি হাঁটতে বের হয়েছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো চলতে থাকি। কোথায় যাচ্ছি জানি না। পরে একটা অটোতে উঠি, নামি মীরেরবাজারে। সেখান থেকে সিএনজিতে জয়দেবপুর যাই। হঠাৎ মনে হলো বাসে উঠি—গাবতলীতে গেলাম। তারপর টিকিট কেটে পঞ্চগড় রওনা দিই।”

তিনি আরও বলেন, “পঞ্চগড়ে নেমে হাঁটতে হাঁটতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আর পুলিশ লাইনস পেরিয়ে যাই। পরে একটা শিকল পাই। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে জামা-পায়জামা খুলে ফেলি। তারপর ঠাণ্ডায় পরতে পারিনি। ওই অবস্থায় মাটিতে শুয়ে পড়ি আর নিজের পায়ে শিকল বেঁধে ফেলি। কেন এমন করলাম বুঝিনি, মাথায় যা এসেছে তাই করেছি।”

এদিকে আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, ইমাম মহিবুল্লাহর অপহরণের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি বলেন, “২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে অপহরণের দাবি করা হলেও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ৬টা ৫২ মিনিটে তিনি বাসা থেকে বের হন, ৬টা ৫৩ মিনিটে মসজিদ ত্যাগ করেন এবং ৭টা ১৮ মিনিটে দ্রুতগতিতে হেঁটে যাচ্ছেন।”

সায়েরের বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, চারটি ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা ফুটেজে কোনো অপহরণের চিহ্ন নেই। বরং দেখা যায়, মহিবুল্লাহ নিজেই দ্রুত গতিতে হাঁটছেন। ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান বলেন, “পুলিশ একাধিকবার আমাদের সিসিটিভি পর্যালোচনা করেছে। হুজুরকে আমাদের স্টেশনের সামনে থেকে কেউ তুলে নেয়নি।”

উল্লেখ্য, ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর বাসা থেকে হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হন মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী। পরদিন সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সিতাগ্রাম এলাকায় মহাসড়কের পাশে শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হলেও তদন্তে তার নিখোঁজ হওয়া সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!