দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীতে বর্তমানে চলছে ব্যাপক সংস্কার কাজ। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও অযত্নে পড়ে থাকা এ প্রাচীন স্থাপনাটি ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে তার পুরনো ঐতিহ্য।
সংস্কার কাজের পুরো প্রক্রিয়াটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক জনাব মো: রফিকুল ইসলাম। তিনি নিয়মিতভাবে কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গাপূজার আগে থেকেই রাজবাড়ীর সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজপ্রাসাদের চারপাশের আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। সংস্কার কাজে যুক্ত কর্মীরা জানিয়েছেন, পুরনো ভবনগুলোর গায়ে জন্ম নেওয়া শ্যাওলা ও আগাছা অপসারণ করে সেগুলো নতুন করে মেরামত ও রং করা হবে।
সংস্কার চলাকালীন সময়ে রাজবাড়ীর প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীন কালের রান্নার কড়াই মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হয়েছে, যা এই স্থাপনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, সংস্কার শেষে রাজবাড়ীটি শুধুমাত্র দিনাজপুর নয়, উত্তরবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে পারে। পাশাপাশি পর্যটন বৃদ্ধি পেলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তারা আশা করছেন।
দিনাজপুর রাজবাড়ী ১৭ শতকে রাজা গৌরী সেনের বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে রাজা প্রণবেশ্বর রায় ও রাজা জগদীশচন্দ্র রায় বাহাদুরের সময়কালে প্রাসাদটি তার স্থাপত্য ও ঐতিহ্যে শীর্ষে পৌঁছে। ইউরোপীয় ও মোগল স্থাপত্যের মিশেলে গড়া এ প্রাসাদে ছিল রাজদরবার, অতিথিশালা, নাট্যমঞ্চ ও রাজপুকুর।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের সাক্ষী এই রাজবাড়ীটি একসময় ছিল সমৃদ্ধ জমিদারি ব্যবস্থার প্রতীক।
দিনাজপুরবাসী এখন অপেক্ষায়— সংস্কার শেষে রাজবাড়ীটি যেন আবারও জেগে ওঠে তার পুরনো গৌরবে, হয়ে ওঠে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক।

আপনার মতামত লিখুন :