ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির ঢল, জীবিকার সংকটে দ্বীপ ছাড়ছেন স্থানীয়রা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৫

সেন্টমার্টিনে রিসোর্ট বিক্রির ঢল, জীবিকার সংকটে দ্বীপ ছাড়ছেন স্থানীয়রা

ছবিঃ সংগৃহীত

কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে এক সময়ের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি এখন মারাত্মক সংকটে পড়েছে। দ্বীপের বাসিন্দারা জীবিকার তাগিদে একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল ও বসতভিটা বিক্রি করে দ্বীপ ছেড়ে যাচ্ছেন। আগে যেখানে দেশের নানা প্রান্তের বিনিয়োগকারীরা রিসোর্ট স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন, এখন সেই জমিই স্থানীয়দের হাতে বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, সেন্টমার্টিনের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল মাছ ধরা ও পর্যটন ব্যবসা। ট্যুরিজমে ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই নিজস্ব জমিতে ছোট ছোট রিসোর্ট গড়ে তুলেছিলেন। মৌসুমে নিজেদের ঘরও ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা। কিন্তু গত বছর থেকে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দ্বীপে পর্যটক সীমিত করায় তাদের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য দ্বীপ উন্মুক্ত করা হলেও রাত্রিযাপনের অনুমতি ছিল না। এতে করে পর্যটকরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাত্র কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে ফিরে যেতে বাধ্য হন। কক্সবাজার থেকে ছয় ঘণ্টার নৌপথ পাড়ি দিয়ে এত স্বল্প সময় থাকা পর্যটকদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পর্যটন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল।

পরবর্তীতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সীমিতভাবে দুই হাজার পর্যটককে যাতায়াত ও রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র দুই মাসের আয় দিয়ে পুরো বছরের সংসার চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক বাসিন্দা বাধ্য হয়ে তাদের রিসোর্ট ও ভিটেমাটি বিক্রি করছেন।

সেন্টমার্টিন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবুল হোসেন জানান, তিনি ২০১৭ সালে ২০ শতক জমিতে ‘দ্বীপ কুটির’ নামে একটি রিসোর্ট প্রতিষ্ঠা করেন। রিসোর্ট থেকে প্রাপ্ত আয়, মসজিদের দায়িত্ব ও মাদরাসার শিক্ষকতা মিলিয়ে তার পরিবারের সাত সদস্যের জীবিকা চলতো। কিন্তু পর্যটক সীমিত হওয়ার পর থেকে রিসোর্টের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি সেটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, সরকারের সীমিতকরণ নীতির কারণে দ্বীপের মানুষ চরম দুর্দশায় পড়েছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করছে, কেউ আবার কাজের খোঁজে মূল ভূখণ্ডে চলে গেছে। সরকার বিকল্প আয়ের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রহিম জিহাদী মনে করেন, দ্বীপে জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে যেভাবে পর্যটন সীমিত করা হয়েছে, তা পরিকল্পিতভাবে সেন্টমার্টিনকে পর্যটন থেকে বিমুখ করার অংশ। তার মতে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ও রমজান সামনে থাকায় পর্যটন মৌসুমেও বড় প্রভাব পড়বে।

এদিকে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নভেম্বর থেকে পর্যটক যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে রাত্রিযাপনের অনুমতি কবে থেকে দেওয়া হবে, তা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দ্বীপবাসীরা এখন সরকারের কাছে টেকসই জীবিকা ও বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরির দাবি জানিয়েছেন। তাদের আশা, যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করে সেন্টমার্টিনে আবারও পর্যটন ব্যবসা সচল করা হবে, যাতে মানুষ নিজেদের দ্বীপ ছাড়তে না হয়।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!