সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (গকসু) এর আয়োজনে 'লালন স্মরণোৎসব–২০২৫' অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে লালন সাঁইয়ের ১৩৫ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়।
বিকেল নামতেই চত্বরজুড়ে ভেসে আসছিল একের পর এক লালনগীতি— ‘সব লোকে কয় কী জাত সংসারে’, ‘তিন পাগলে হলো মেলা’, ‘আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’। গানের সুরে, ভাবনায়, আর উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও উৎসবের আমেজ ছিল অটুট। তখনো মঞ্চে গাওয়া হচ্ছিল ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে’— চারদিকে গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাততালি, কেউবা চোখ বুজে দুলছেন ভাবের সুরে। একাডেমিক ব্যস্ততার মাঝেও এমন আয়োজনে শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন এক টুকরো প্রশান্তি, পেয়েছেন মিলনের আনন্দ।
এ বিষয়ে গকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মারুফ বলেন, “আজ গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে এটি আমাদের প্রথম আয়োজন। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতেও এমন সুন্দর সাংস্কৃতিক আয়োজন অব্যাহত রাখতে পারব। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্নের মতোই ‘গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি’ তুলে ধরা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, “লালন আমার খুব প্রিয়। তার গান ও দর্শন আলাদাভাবে দাগ কাটে। লালনের গান শুনলে এক অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি জাগে। আমরা চাই, এই আয়োজনের মাধ্যমে লালনের দর্শন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে ছড়িয়ে পড়ুক। এমন আয়োজন যেন প্রতি বছর স্মরণীয় হয়ে থাকে।”
সহকারী রেজিস্টার এনামুল হক বলেন, “লালন ছিলেন বৈষম্যবিরোধী মানুষ। আজও তার দর্শন প্রাসঙ্গিক। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন দূর করতে লালনের শিক্ষা অনুসরণ করা জরুরি। আমরা চাই, তার দর্শনের আলোয় ক্যাম্পাসে মমতা ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হোক।”
গকসুর ভিপি মৃদুল দেওয়ান বলেন, “দীর্ঘ সাত বছর পর আমাদের চতুর্থ ছাত্র সংসদ গঠিত হয়েছে। প্রথম উদ্যোগ হিসেবে আমরা চেয়েছি শিক্ষার্থীদের লুকানো প্রতিভা প্রকাশ করতে। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন নিয়মিত করব, যাতে গবি শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হয়।”
জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে অংশ নেয় বিভিন্ন বিভাগের অসংখ্য শিক্ষার্থী। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই ট্রান্সপোর্ট চত্বর ভরে ওঠে দর্শক ও লালনভক্তে। মঞ্চে গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন অনেকে— সুরের সেই মেলায় মিশে ছিল ভক্তি, ভালোবাসা আর একাত্মতার সুর।
আপনার মতামত লিখুন :