জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পরিকল্পনা প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বংশাল থানার ওসি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের ব্রিফিং অনুসারে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বর্ষি(বার্জিস শাবনাম বর্ষা) ও মাহির রহমান এই পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ঘটনাৰ দিন—রবিবার ১৯ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক ৪টা ৩০ মিনিটে জোবায়েদ আরমানিটোলার নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলায় টিউশনি করাতে গেলে beneden (বসতঘরের নিচতলায়) ওৎপেতে থাকা মাহির ও তাঁর বন্ধু ফারদিন (আইলান) উপস্থিত থেকে হামলা শুরু করেন। মাহিরের ব্যাগে রাখা সুইচ গিয়ার (চাকু) বের করে প্রথম আঘাত করে মাহির, পরে জোবায়েদ আর চলতে না পেরে পড়ে যান। ঘটনার সময় বর্ষা তিন তলায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পুলিশ বলছে যে তিনি জুবায়েদকে হত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন এবং ঘটনাস্থলের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সহায়তা করেছেন।
পুলিশ আরও জানায়, অভিযোগ অনুযায়ী বর্ষার সাথে মাহিরের দীর্ঘদিনের (প্রায় ৯ বছর) সম্পর্ক ছিল; পরে ওই ছাত্রী জোবায়েদের সঙ্গে কিছুসময় সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনায় পৌঁছায়—এই ইস্যুই হত্যার মূল কারণ বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে। পুলিশি বিবরণে বলা হয়েছে, সম্পর্কগত বিরোধের জেরেই পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
ঘটনার পর বংশাল থানায় এ নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হিসেবে জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত অভিযোগ করেন, তিনি প্রকৃত অপরাধীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে মামলায় উল্লেখ করেছেন এবং দ্রুত সুষ্ঠ বিচার চান। এই ঘটনায় বর্তমানে বর্ষাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অপর কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
জোবায়েদ হোসাইন ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র; একই সঙ্গে তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। রবিবার বিকেলে তিন তলায় যাওয়ার সময় সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়—সিঁড়ি নীচ থেকে তিন তলা পর্যন্ত রক্ত পড়ে থাকার চিত্র পাওয়া যায়। নিহতের পরিবারের দাবি ও এলাকাবাসীর ক্ষোভের কারণে বংশাল থানার সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখায় এবং দ্রুত গ্রেপ্তারকরণ ও বিচার দাবি করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণসহ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ থেকে যে তথ্য বেরিয়েছে, তার ভিত্তিতেই পরিকল্পনা ও সহযোগিতার কথাগুলো উঠে এসেছে। বুধবার পর্যন্ত তদন্ত চলমান আছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও ধাওয়া করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পরিবার ও সহপাঠীরা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। জোবায়েদকে দাফন শেষে সেখানকার ছাত্র-শিক্ষক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো হত্যার ন্যায়বিচার হওয়া পর্যন্ত প্রতিদাবি ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পুলিশ বলেছে, মামলার প্রক্রিয়া অনুসারে দ্রুত তথ্যসমেত আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে এবং তদন্ত শেষে প্রকৃত দন্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :