ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) গঠনের লক্ষ্যে আজ (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) অনুষ্ঠিত হচ্ছে দ্বিতীয় পার্লামেন্ট ডাকসুর নির্বাচন। দীর্ঘ প্রস্তুতি ও উত্তেজনার পর সকাল থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
আসন ও প্রার্থী সংখ্যা
ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৮টি পদে এবার ভোট হচ্ছে। এসব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী, যাদের মধ্যে ৬২ জন নারী প্রার্থী। প্রতিটি পদে প্রতিযোগিতা তীব্র, যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিটি পদে প্রার্থীর সংখ্যা:
সহ-সভাপতি (ভিপি): ৪৫ জন
সাধারণ সম্পাদক (জিএস): ১৯ জন
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): ২৫ জন
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ১৭ জন
কমনরুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: ১১ জন
আন্তর্জাতিক সম্পাদক: ১৪ জন
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: ১৯ জন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: ১২ জন
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: ৯ জন
ক্রীড়া সম্পাদক: ১৩ জন
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক: ১২ জন
সমাজসেবা সম্পাদক: ১৭ জন
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক: ১৫ জন
মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক: ১১ জন
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক: ১৫ জন
সদস্য (১৩ পদে): ২১৭ জন
তফসিল ও প্রক্রিয়া
তফসিল ঘোষণা: ২৯ জুলাই
মনোনয়ন সংগ্রহ: ১২–১৮ আগস্ট
মনোনয়নপত্র জমা: ১৯ আগস্ট
যাচাই-বাছাই: ২০ আগস্ট
প্রাথমিক তালিকা: ২১ আগস্ট
মনোনয়ন প্রত্যাহার: ২৫ আগস্ট
চূড়ান্ত তালিকা: ২৬ আগস্ট
ভোটগ্রহণ: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শুরুতে ৬৫৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেন ১০৬ জন। যাচাই-বাছাই শেষে ৪৬২ জন প্রার্থীর নাম প্রাথমিক তালিকায় আসে, তবে ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র বাদ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয় ৪৭১ জন প্রার্থীকে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বাইরে কড়া নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
প্রার্থীদের শপথ ও প্রতিশ্রুতি
প্রধান প্রধান প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ২০৫ জন প্রার্থী শপথ নিয়েছেন যে তারা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন।
ভোটার মনোভাব ও জরিপ ফলাফল
ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা ও প্রত্যাশা উভয়ই প্রবল। সম্প্রতি করা দুটি জরিপে দেখা গেছে—
এক জরিপে ছাত্রদল ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান সর্বোচ্চ ৪৬% সমর্থন পেয়েছেন।
বাগছাসের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদির পেয়েছেন ১৮%, আর স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমার পক্ষে ১২% শিক্ষার্থী সমর্থন জানিয়েছেন।
অন্য এক বৃহৎ জরিপে দেখা যায়, ৩৮.৮৫% ভোটার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন করছেন, যা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের (২০.৯২%) এবং ছাত্রদলের (১৬.৪২%) চেয়ে বেশি।
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
ঢাবি শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন ডাকসু সংসদ তাদের একাডেমিক, সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, এবার যদি সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হয় তবে সেটি হবে ক্যাম্পাস রাজনীতির একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
আপনার মতামত লিখুন :