রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্তে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এসব কলেজ থেকে দেড় হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা ঢাকার বাইরে বদলি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন, ফলে শিক্ষা প্রশাসনে নিজেদের কর্তৃত্ব হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ক্ষমতা কমিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) হাতে পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্ব হস্তান্তরের সিদ্ধান্তও শিক্ষা ক্যাডারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এনসিটিবি বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বই ছাপার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু এখন প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজস্বভাবে সেই কাজ পরিচালনা করতে চায়।
এদিকে, মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) মহাপরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের পদে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা দাবি করছেন, এই পদে নিয়োগ নয়, বরং পদায়ন হয়ে থাকে—তাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ অনিয়ম। ক্ষোভ জানিয়ে বর্তমান মহাপরিচালক পদত্যাগপত্রও দিয়েছেন।
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, মাউশিকে দুটি আলাদা অধিদপ্তরে ভাগ করা এবং এনসিটিবির ক্ষমতা হ্রাসের উদ্যোগ শিক্ষা প্রশাসনের কর্তৃত্বে বড় আঘাত হানবে। ২০২৩ সালের ডিসি সম্মেলনে এই প্রস্তাব প্রথম আসে, তবে তখন আপত্তির মুখে স্থগিত হয়। আড়াই বছর পর আবারও প্রস্তাবটি সরকারপ্রধানের অনুমোদন পেয়েছে।
অন্যদিকে, সরকার এনসিটিবি আইন ২০১৮ সংশোধন করে ২০২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার দায়িত্ব ডিপিইকে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এটি কারিকুলাম ও বই সরবরাহে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, কারণ পাঠ্যবই মুদ্রণ একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া, যা এনসিটিবি দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার সঙ্গে করছে।
ডিপিই কর্মকর্তারা যুক্তি দিচ্ছেন, প্রাথমিক বইয়ের বাজেট তাদের মন্ত্রণালয়ের আওতায়, তাই সরাসরি কাজ করলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতে, এতে এনসিটিবি ও তাদের প্রশাসনিক ভূমিকা দুর্বল হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির সভাপতি এস এম কামাল আহমেদ বলেন, “অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলে এই বিভাজন ঠেকানো হবে।”
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, “শিক্ষা সবচেয়ে বড় ক্যাডার। বিভাজনের সিদ্ধান্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি করবে।”
বর্তমানে ১৯,৮৬৮টি পদের বিপরীতে সাড়ে ১৭ হাজার কর্মকর্তা কর্মরত আছেন শিক্ষা ক্যাডারে। তবে পদোন্নতি, তৃতীয় গ্রেডের সুযোগ ও কর্তৃত্ব হারানোর আশঙ্কা—সব মিলিয়ে ক্যাডারটির মধ্যে এখন প্রবল অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সূত্রঃ সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :