ঢাকা শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

গণভোট সামনে রেখে প্রস্তুতি জোরদারের নির্দেশ ইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫

গণভোট সামনে রেখে প্রস্তুতি জোরদারের নির্দেশ ইসির

ছবিঃ সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও ঘোষিত গণভোটের প্রেক্ষাপটে সারাদেশে প্রশাসনিক প্রস্তুতি জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় সভায় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে হলে ভোটকেন্দ্র ও কর্মকর্তা সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং বাজেট বরাদ্দও সে অনুযায়ী সমন্বয় করতে হবে। আর পৃথক দিনে ভোট আয়োজন হলে আলাদা ব্যয় ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হবে।

সভায় অংশ নেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ও কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহসহ ইসির সদস্যরা। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র, অর্থ, আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়সহ ৩১টি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসি জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক ভোটকেন্দ্র তালিকা তৈরি হয়েছে। এখন মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন ও কেন্দ্র–সংক্রান্ত অবকাঠামো প্রস্তুতির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। সিইসি সভায় বলেন, ভোট একই দিনে হবে নাকি আলাদা—এ বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তিনি নির্দেশ দেন, সরকারি কর্মকর্তারা জেলা–উপজেলায় সফরে গেলে স্থানীয় নির্বাচনি প্রস্তুতিও পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

সভায় মাঠ পর্যায়ে যাতায়াত–সহায়তায় দুর্গম এলাকায় হেলিপ্যাড সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত পৌঁছানো যায়। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় একজন চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগেও স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় জোরদারের কথা বলা হয়।

ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিদ্যালয়–কলেজগুলোর অবকাঠামো সচল রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা নিয়মিত কার্যকর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব স্থাপনায় কেন্দ্র স্থাপন হবে, সেসব এলাকার রাস্তা–ঘাট ও প্রবেশপথ সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে নির্দেশনা পেয়েছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানায় ইসি। সরকারি শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ভুল তথ্য প্রতিরোধে একটি এআই–ভিত্তিক মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনার কথাও বৈঠকে জানানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শনাক্ত করে দ্রুত প্রতিরোধে এই সেল কাজ করবে।

ভোটার সচেতনতা বাড়াতে বিটিভি ও সংসদ টেলিভিশনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বিটিভি নিউজ ও ফ্ল্যাশ বার্তার মাধ্যমে ভোটারদের তথ্য জানানো হবে।

ইসির নির্দেশনায় প্রবাসী ভোটার ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থাও উন্নত করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক ডিজিটাল ভোটিং অ্যাপ তৈরি হয়েছে, যা ১৬ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে। এ উদ্যোগ দেশের বাইরে থাকা ভোটারদের ভোটাধিকার সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সভায় অর্থ বিভাগ জানায়, ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ সচিবকে এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন বরাদ্দ ছাড়ে সময়ক্ষেপণ না হয়।

সভা শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সেই অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা–সূচি নির্ধারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে ভোটকেন্দ্র আগেই প্রস্তুত করতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দ্রুত ভিসা দেওয়ার নির্দেশ ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, যে ব্যবস্থায় ভোট হলেও লক্ষ্য একটাই—নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজন। এজন্য এখন থেকেই প্রতিটি বিভাগ ও দপ্তরকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে হবে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!