জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জকসু) নির্বাচনের বিধিমালা প্রকাশ ও নির্বাচন কমিশন গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নির্বাচনী উত্তাপ তৈরি হয়েছে। প্রথমবারের মতো জকসু নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো এখন অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনের উদ্যোগে ব্যস্ত সময় পার করছে। পাশাপাশি কিছু স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীও আংশিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেদের প্যানেল তৈরির চেষ্টা করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়, চারটি সংগঠন অন্তত তিনটি প্যানেল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির আলাদাভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল তৈরির পরিকল্পনা করেছে। অন্যদিকে, জাতীয় ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদ যৌথভাবে একটি প্যানেল গঠনের বিষয়ে আলোচনায় আছে।
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, তারা সংগঠনের বাইরের জনপ্রিয় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্যানেলে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। শীর্ষ তিন পদ—ভিপি, জিএস ও এজিএসের মধ্যে অন্তত দুইটি পদে নারী প্রার্থী রাখার চিন্তাভাবনা চলছে, যার একজন সংগঠনের বাইরের হতে পারেন। এছাড়া একাডেমিক ও সাংস্কৃতিকভাবে পরিচিত শিক্ষার্থীদেরও দলে নেওয়া হতে পারে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরও তাদের ঐতিহ্যগত কাঠামোর বাইরে গিয়ে নারী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অরাজনৈতিক মুখকে অন্তর্ভুক্ত করে প্যানেল গঠনের পরিকল্পনা করছে। সংগঠনের শীর্ষ তিন পদের একটিতে শিবিরের বাইরের প্রার্থী রাখার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রী সংস্থা ও জুলাই আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদেরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদ যৌথ প্যানেল গঠনের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। উভয় সংগঠন নিজেদের মধ্যে পদ বণ্টন এবং যোগ্য, আন্দোলন-সক্রিয় ও একাডেমিকভাবে দক্ষ শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।
বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ প্যানেল গঠনের আলোচনা চলছে। তারা মনে করছে, একাধিক প্যানেল দিলে ভোট বিভক্ত হবে এবং ফলাফল প্রতিকূল হতে পারে। তাই তারা এমন শিক্ষার্থীদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে যারা রাজনৈতিকভাবে সরাসরি যুক্ত না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সক্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে তারা যৌথ প্যানেল করবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা এখনো প্যানেল চূড়ান্ত করিনি। আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে সংগঠনের বাইরের শিক্ষার্থীদেরও বিবেচনা করছি। নারী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।”
শিবির শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “আমরা সর্বজনীন অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছি, যেখানে সংগঠনের বাইরের যোগ্য শিক্ষার্থীরাও সুযোগ পাবেন।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “ছাত্রশক্তির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে, বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ জানান, “যোগ্যতা ও নেতৃত্বগুণের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হবে। নারী ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হবে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “আমরা প্রগতিশীল, নারী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছি।”
এদিকে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান জানিয়েছেন, আগামী রোববার সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনের সময়সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।

 
               
                             
                             
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার মতামত লিখুন :