মরক্কোয় সাম্প্রতিক জেন-জি তরুণদের নেতৃত্বে চলা আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হওয়া এক শিক্ষার্থীকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এ রায়ের তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষার্থীর আইনজীবী।
এটি জেন-জি নেতৃত্বাধীন চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে কাউকে দেওয়া প্রথম প্রকাশ্য কারাদণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই শিক্ষার্থী ‘অননুমোদিত ও নিরস্ত্র সমাবেশে অংশগ্রহণ’ করেছেন এবং ‘বিচার বিভাগীয় পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপমান’ করেছেন। তবে শিক্ষার্থীর আইনজীবী মোহাম্মেদ নুইনি রায়টিকে ‘অন্যায্য’ বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
তার ভাষায়,
“শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট বা অবস্থান কর্মসূচির জন্য আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই—এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট রায় রয়েছে। এ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আইনসঙ্গত নয়।”
নুইনি আরও জানান, তার মক্কেলকে আন্দোলন শুরুর তিনদিন পর, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।
মরক্কোর সংবাদমাধ্যম হেসপ্রেস-এর বরাতে জানা গেছে, শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার ছিল ‘দুর্ভাগ্যজনক এক কাকতালীয় ঘটনা’। কারণ তিনি সেদিন পারিবারিক সফরে কাসাব্লাঙ্কায় ছিলেন। আদালতে শিক্ষার্থীর পক্ষে আরেক আইনজীবী মোহাম্মেদ লাক্ষদার বলেন,
“তিনি কোনো মিথ্যা তথ্য দেননি, পুলিশের অবমাননাও করেননি—তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘আমি একজন শিক্ষার্থী।’”
সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে মরক্কোর বিভিন্ন শহরে প্রতিদিন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। আন্দোলনের শুরুতে শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছু এলাকায় ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনাও ঘটে।
কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, আগাদিরের কাছে এক গ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় তিনজন নিহত হন—যাদের মৃত্যু আত্মরক্ষায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরিণাম বলে দাবি করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা এএমডিএইচ জানিয়েছে, এ আন্দোলনের জেরে দেশজুড়ে প্রায় ৫৫০ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে এখনও আটক রয়েছেন।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে অনলাইনভিত্তিক তরুণ সংগঠন ‘জেনজি ২১২’, যাদের সদস্যদের পরিচয় এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। সংগঠনটি আবারও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করেছে।
আন্দোলনের পেছনের কারণ:
জেনজি ২১২ আন্দোলনের সূত্রপাত হয় আগাদির শহরের একটি হাসপাতালে একদিনে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সময় আটজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তরুণ সমাজ। ধীরে ধীরে তাদের দাবির তালিকায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, সরকার পরিবর্তন, এবং মানবাধিকার নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :