নভেম্বর মাসে ২৭ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব বাছাইয়ের সুযোগ থাকায় ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এক সমস্যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—ছাত্ররাজনীতিতে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অভাব এবং প্রার্থী সংকট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠন মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় পুরুষদের সরব উপস্থিতি থাকলেও নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বা আপ বাংলাদেশ—কোনো সংগঠনই সক্রিয় নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি। ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কমিটিতে দুই-তিনজন নারী নাম থাকলেও তারা কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়। শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টে কিছু নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, বহুদলীয় কোন্দল এবং নেতৃত্ব কাঠামোয় নারীদের কম স্থান থাকার কারণে নারীরা রাজনীতিতে অনাগ্রহী। একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, “ক্যাম্পাসে রাজনীতি মানেই সংঘর্ষ, হুমকি ও দ্বন্দ্ব। এই পরিবেশে মেয়েরা অংশ নিতে ভয় পায়। কোনো দলের কমিটিতেই নারীদের তেমন জায়গা নেই।”
জুলাই মাসের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের সময় নারীরা আন্দোলনের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এরপর থেকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ কমতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে অনেকে অনলাইন বুলিং, হ্যারাসমেন্ট ও শ্লাটশেমিংয়ের শিকার হন। এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “যদি কোনো পোস্টে মত দেয় বা আন্দোলনের ছবি দেয়, সঙ্গে সঙ্গে নানা মন্তব্য শুরু হয়। এতে অনেকে বিব্রত হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকে।”
জুলাই অভ্যুত্থানে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করা শিক্ষার্থী সর্ণা রিয়া বলেন, মেয়েরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অনলাইন সংস্কৃতি তাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকও বলেন, নারীরা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হলে তাদের চরিত্র বা পোশাক নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়, যা অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসিব বলেন, “বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণে গ্যাপ আছে। আমরা চেষ্টা করি। এবারের জকসু নির্বাচনে আমাদের প্যানেল ইনক্লুসিভ হবে, ৫০-৫০ না হলেও ৬০-৪০ হারে নারীর অংশ থাকবে।” শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতির কথায়, তাদের প্যানেলে নারীদের অংশগ্রহণ থাকবে, তবে শতাংশ নির্ধারণ এখনও হয়নি। ছাত্রদলের প্যানেলের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই। মূল বিষয় হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা। বর্তমান পরিবেশ তাদের জন্য অনুকূল।
আপনার মতামত লিখুন :