জুলাই বিরোধী শক্তির আস্ফালনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার (২ নভেম্বর) দুপুর দেড়টা নাগাদ ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে একটি মিছিল বের হয়ে প্রধান ফটক হয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘একশন টু একশন, ডাইরেক্ট একশন’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ’দালালদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ’ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নুরউদ্দীন বলেন, গতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কতিপয় শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয় এবং হাতে গোণা কয়েকজন ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ইবি শাখার সভাপতির নাম ছাড়া একটা প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আমরা সকল ছাত্রসমাজ তার প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টনক নড়েনি। আমরা গত কয়েকদিন আগে যখন দেখলাম যে তারা ৩০ তারিখে সিন্ডিকেটের কথা বললো, সেই সিন্ডিকেটে তারা আরাফাতকে বাদ দিয়ে তারা চুনোপুঁটিকে বহিষ্কার করলো। আমরা এই নাটককে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য পালিয়ে যাওয়া সালামের প্রশাসনের যে প্রক্টর ছিল, ট্রেজারার ছিল, প্রো-ভিসি ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে হাতেগোণা কয়েকজন চুনোপুঁটি যারা সহকারী প্রক্টর ছিল কিংবা কোনো বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আজাদের মতো কুলাঙ্গার যারা আমার জুলাই আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। সেই আজাদকে যখন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়না তখন আমাদের প্রশ্ন জাগে আপনারা কিসের বিনিময়ে, কত টাকার বিনিময়ে আপনারা এই বিচারের প্রহসন চালু করেছেন।
এসময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, চব্বিশের বর্ষা বিপ্লবের প্রায় দেড় বছর পর আমাদেরকে আবারও মাঠে নামতে হচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন আসার পরপরই চব্বিশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তার যেসব সহযোগীরা, যেসব দালালরা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল, যারা শেখ হাসিনার সেই গণহত্যাকে বৈধতা দিয়েছিল লেখনির মাধ্যমে, টকশোর মাধ্যমে, তাদের সকলকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম। অনেকদিন পর হলেও একটি তালিকা দেয়া হয়েছে যে কাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু এ তালিকা আমাদের আশা পূরণ করতে পারেনি। এ তালিকাটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত তালিকা। এর পর্যাপ্ততা নেই। কারণ শুধুমাত্র চার আগস্টেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভটি সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষকরা ছিল। তাদের সবার নাম আসে নাই এবং তাদেরকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছির তাদেরও নাম আসেনাই। সেসময় ছাত্রলীগকে যারা শেল্টার দিতো তাদেরও নাম আসেনাই। এ তালিকায় রাঘববোয়ালদের বাইরে রেখে যারা তুলনামূলক কম দোষী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। আপনারা আগামী একসপ্তাহের মধ্যে এ তালিকা পূর্নাঙ্গ করবেন এবং যার যে দোষ তাকে সে শাস্তি দিবেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেয়েছিলাম গণহত্যার সাথে যারা জড়িতে তাদের যেমন বিচার হোক, তেমনই চেয়েছিলাম বিগত ষোলো বছরে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অন্যায়ের সাথে যারা জড়িত তাদেরও যেন শাস্তির আওতায় আনা হয়। আমরা দেখেছি একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত কমিটির নাকি একটি রুমও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও কেন সেই ফলাফল দিতে পারতেছে না? তাদের ভয় কিসের? আপনাদের যদি ভয় থাকে তাহলে আপনাদের তো ক্যাম্পাসে আসার দরকার নাই। যদি আপনাদের গাটস না থাকে আপনারা দায়িত্ব থেকে সরে যান। আপনাদের জায়গায় অন্য কেউ আসবে। আশা করবো তারা দায়িত্ব পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার যারা আছেন, এ দায় আপনারা এড়াতে পারেন না। একজন তদন্ত কমিটির প্রধান কাজ না করলে আপনিও দায় এড়াতে পারেন না। দুর্নীতির যে খতিয়ান, দুর্নীতির যে শ্বেতপত্র সেটিও এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। আমনা দেখতে চাই, কিভাবে পনোরো-ষোলো বছরে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে কিভাবে তারা আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন :