শাহরিয়ার মোর্শেদ খান। বয়স ৫১ বছর। বুধবার দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে আসেন তিনি। মুখে কিছুটা ভাঁজ পড়া চামড়া, পাতলা চুল ও পাকা দাড়ি। স্বাভাবিকভাবে তাকে দেখে যে কেউ মনে করবেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন অথবা কোনো অফিসিয়াল কাজে এসেছেন। কিন্তু না, তিনি এসেছেন রাকসুর মনোনয়নপত্র তুলতে। এ ঘটনা দেখে বিস্মিত কার্যালয়ের সবাই।
৫১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মোর্শেদ খান ‘মিডিয়া ও প্রকাশনা’ পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী জীবনের সংগ্রামী অভিজ্ঞতা নিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান। তার এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শাহরিয়ারের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার রাজাপুর গ্রামে। ১৯৯৯-২০০০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় পারিবারিক সমস্যায় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়। এর পর ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ২০১৪ সালে আবার লেখাপড়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ভোকেশনাল কারিগরির নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এসএসসি (২০১৭) এবং এইচএসসি (২০২০) পাস করেন। অবশেষে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন।
শাহরিয়ারের পরিবারে স্ত্রী এবং চার মেয়ে আছেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন গত মাসে। মেয়ের স্বামী তারই শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়েন। শাহরিয়ার থাকেন হবিবুর রহমান হলে। আর মেয়ের জামাই থাকেন পাশের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে।
পরিবার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া শাহরিয়ারের জন্য চ্যালেঞ্জিং। বিভাগ থেকে কিছু বৃত্তির টাকা পান। রাজশাহীতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা কঠিন হলেও তিনি রাজশাহী টেক্সটাইল কারখানায় আবেদন করেছেন।
শাহরিয়ার মোর্শেদ খান বলেন, আমার জীবনটা সংগ্রামের। পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারিনি। অনেক বছর পর আবার পড়াশোনা শুরু করি। আমার এখন বয়স চলে ৫১ বছর। এখন আমি পড়াশোনা করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ বছর পড়েছি। দেখেছি, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের আশা-প্রত্যাশা হরণ করেন। মুখে বলেন এক, কাজে অন্য। এই দিকটা ভেবেই রাকসু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৫১ বছর বয়সী কাউকে যদি শিক্ষার্থীরা ভোট দেন, আমি তাদের জন্য চেষ্টা করব। তিনি জয়ী হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করবেন বলে জানান।
রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. সেতাউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। শাহরিয়ারের বয়স বেশি হলেও সমস্যা নেই।
আপনার মতামত লিখুন :