মাথাব্যথা একটি পরিচিত সমস্যা, যা প্রায় প্রতিদিন অনেকেরই ঘটে। সাধারণত ক্লান্তি, স্ট্রেস, ঘুমের অভাব বা ঠান্ডা লাগার কারণে এটি হয়। তবে কখনও কখনও মাথাব্যথা কেবল অস্থায়ী সমস্যা নয়; এটি গুরুতর কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিতও হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথাব্যথার কারণ হতে পারে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যহীনতা, পরিবেশগত চাপ বা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা।
মাথাব্যথা কখন বিপদের সঙ্কেত দেয়
-
প্রতিদিন মাথাব্যথা হওয়া: মাঝে মাঝে হালকা মাথাব্যথা সাধারণ হলেও, যদি প্রতিদিন একই সময়ে বা প্রায় নিয়মিতভাবে মাথা ব্যথা করে, তাহলে এটি বড় সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ইলেকট্রোলাইট ঘাটতি বা মস্তিষ্কের রক্তনালীর পরিবর্তনের কারণ হতে পারে।
-
ডিহাইড্রেশন এবং গরমের চাপ: গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীরের সূক্ষ্ম ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে, যা মাথাব্যথার কারণ হয়।
-
জোরে মাথাব্যথা বা হঠাৎ ব্যথা: হঠাৎ, তীব্র বা অন্য ধরনের মাথাব্যথা যেমন চোখের চাপ, ঘাড়ে ব্যথা বা শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে আসে—এগুলি সতর্কতার ইঙ্গিত।
-
অতিরিক্ত শোরগোল বা আলোতে সংবেদনশীলতা: মাথাব্যথা যদি আলো, শব্দ বা গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতার সঙ্গে আসে, তখন তা মাইগ্রেন বা অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
মাথাব্যথা রোধের উপায়
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন: হাইড্রেশন অত্যন্ত জরুরি। শরীর থেকে পানি ও ইলেকট্রোলাইট বেরিয়ে গেলে মাথাব্যথা বাড়তে পারে। ঠান্ডা পানি বা ইলেকট্রোলাইট-সমৃদ্ধ পানীয় সাহায্য করে।
-
শরীর ঠান্ডা রাখুন: গরমে বেশি সময় রোদে থাকা থেকে বিরত থাকুন। ছায়ায় থাকুন, ফ্যান ব্যবহার করুন বা এসি ঘরে বিশ্রাম নিন।
-
পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিন: ঘুমের অভাব মাথাব্যথার প্রধান কারণ। সুস্থ শরীর গরম ও মানসিক চাপ সহ্য করতে পারে।
-
ডিহাইড্রেটিং পানীয় এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন শরীরকে আরও শুকিয়ে দেয়, ফলে মাথাব্যথা বাড়তে পারে।
-
চোখের যত্ন নিন: রোদে বাইরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন। চোখের চাপও মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। কম্পিউটার বা ফোনের স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় থাকলেও বিরতি নিন।
-
নিয়মিত খাবার ও পুষ্টি বজায় রাখুন: দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা, চিনি বা লবণের ভারসাম্যহীনতা মাথাব্যথা বাড়াতে পারে।
-
মানসিক চাপ কমান: স্ট্রেস ও উদ্বেগ মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম সাহায্য করতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে
- হঠাৎ বা তীব্র মাথাব্যথা, যা আগের মাথাব্যথার থেকে আলাদা।
- বমি, দৃষ্টি অস্পষ্টতা, হাত বা পায়ে দুর্বলতা বা অনিয়মিত ভাষা।
- সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা বা সংক্রমণের সঙ্গে মাথাব্যথা।
- মাথাব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে চলা বা প্রতিদিনই হওয়া।
হালকা মাথাব্যথা সাধারণ হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি বা তীব্র মাথাব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়। পর্যাপ্ত পানি, বিশ্রাম, চোখের সুরক্ষা, মানসিক শান্তি এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সতর্কতার সঙ্গে মাথাব্যথার ধরন পর্যবেক্ষণ করলে গুরুতর সমস্যা সময়মতো শনাক্ত করা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :