ঢাকা শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ: অভিযুক্তের হুমকিতে আতঙ্কে ভুক্তভোগী

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫

কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ: অভিযুক্তের হুমকিতে আতঙ্কে ভুক্তভোগী

ছবিঃ সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী তার সহপাঠীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর, তবে দীর্ঘ আট মাস পার হলেও এখনো বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত ছাত্র সুলতান আহমেদ শান্ত (২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন গ্রামের বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুবাদে প্রায় দুই বছর আগে সুলতানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কয়েক মাস আগে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু নোট ও ব্যবহৃত ল্যাপটপ সে সুলতানকে দিয়েছিলেন। পরে ল্যাপটপ ফেরত চাইলে সুলতান জানায়, সে অসুস্থ, তাই তার মেসে গিয়ে ল্যাপটপ ও খাতাগুলো নিয়ে যেতে।

ছাত্রী বলেন, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে তিনি কিশোরগঞ্জ থানার হারুয়া ফিসারী লিংক রোড এলাকার সুলতানের মেসে যান। সেখানে সুলতান কৌশলে তাকে একটি বেডরুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। তিনি জানান, প্রাণপণ চেষ্টা করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। এরপর কান্নাকাটি করলে সুলতান তাকে ল্যাপটপ ফেরত দেয় এবং কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয় দেখায়।

ভুক্তভোগী বলেন, ঘটনাটি প্রকাশ করলে সুলতান তাকে কিশোরগঞ্জে পড়তে দেবে না এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়লেও প্রথমে ভয় পেয়ে বিষয়টি গোপন রাখেন তিনি। পরে সুলতানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মা দেখা করতে এসে তাকে পুরাতন মেডিল্যাব হাসপাতালে নিয়ে যান এবং স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাসিমাতুল জান্নাত মিতুলের কাছে ‘পুত্রবধূ’ পরিচয়ে চিকিৎসা করান।

এরপর ছাত্রীটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি জানান, সুলতানের মা ও মামা তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পরিবারকে জানিয়ে থানায় মামলা করেন তিনি। মামলার পর সুলতান দুই মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আবারও তাকে হত্যার হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী বলেন, ধর্ষণের পর সুলতান বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তা রাখেনি। উল্টো তাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতে চায় এবং ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। তার মোবাইল ফোন চুরি করে প্রমাণ নষ্টেরও চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করলে সুলতান হুমকি দেয় যে, বিষয়টি প্রকাশ করলে সে আত্মহত্যা করবে এবং দায় তার (ছাত্রীটির) ওপর চাপাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রশাসনিক ও আইনগত প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে তদন্ত সম্পন্ন করতে সাত থেকে আট মাস সময় লেগেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তদন্ত শেষ হয়েছে, এবং আগামী এক মাসের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অভিযুক্ত ছাত্র সুলতান আহমেদ শান্তের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোন কেটে দেন এবং কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!