ঢাকা সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫

শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে বাতিল ১৪০০’র বেশি ফ্লাইট

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৯, ২০২৫

শাটডাউনে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে বাতিল ১৪০০’র বেশি ফ্লাইট

ছবিঃ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আকাশপথে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) একদিনেই দেশটিতে ১ হাজার ৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, আর বিলম্বিত হয়েছে আরও কয়েক হাজার ফ্লাইট। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মার্কিন বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ‘ফ্লাইটঅ্যাওয়ার’ জানিয়েছে, সেদিন প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়, যেখানে শুক্রবার বিলম্বের সংখ্যা ছিল ৭ হাজারেরও বেশি।

ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, সরকারি অচলাবস্থার কারণে বেতন ছাড়া কাজ করা বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ক্লান্তি দেখা দিয়েছে। ফলে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ৪০টি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

অচলাবস্থা শুরু হয় গত ১ অক্টোবর। কংগ্রেসে অর্থায়ন ইস্যুতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্বের কারণে এ অচলাবস্থা দীর্ঘ হচ্ছে। শনিবার মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউনের ৩৯তম দিন অতিক্রান্ত হয়।

সরকার পুনরায় চালু করতে একটি সমঝোতা খুঁজে বের করার লক্ষ্যে সিনেটররা সপ্তাহান্তেও আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি, পরিবহন ও বিমান চলাচল ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

আমেরিকান এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ওয়াশিংটনের নেতারা দ্রুত সমাধানে পৌঁছে এই অচলাবস্থা বন্ধ করুন। এটি শুধু বিমান চলাচল নয়, সাধারণ মানুষের জীবনকেও বিপর্যস্ত করছে।”

বিবিসির তথ্যমতে, শনিবার সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার মুখে পড়েছে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর। বিকেল পর্যন্ত সেখানে ফ্লাইটগুলো গড়ে চার ঘণ্টারও বেশি দেরিতে পৌঁছাচ্ছিল, আর ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলো দেরি করছিল প্রায় দেড় ঘণ্টা।

সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে শার্লট/ডগলাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল ও শিকাগো ও’হেয়ার বিমানবন্দরে। এফএএ জানিয়েছে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত জন এফ কেনেডি ইন্টারন্যাশনাল, হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ও লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট ছাড়তে যথাক্রমে তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে।

পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী ডাফি জানিয়েছেন, কেবল বাণিজ্যিক ফ্লাইট নয়, ব্যক্তিগত জেটের চলাচলেও সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোয় ব্যক্তিগত জেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তাদের ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের চাপ কমানো যায়।”

এফএএ জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ধাপে ধাপে ফ্লাইট সংখ্যা কমানো হচ্ছে—শুক্রবার ৪ শতাংশ, ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, এই পদক্ষেপগুলো নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য জরুরি। বেতন ছাড়াই কাজ করতে হওয়ায় বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ক্লান্তি ও অনুপস্থিতি বাড়ছে। অনেকেই অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা অতিরিক্ত কাজ করছেন দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে।

এদিকে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এজেন্সির (টিএসএ) ৬৪ হাজার কর্মীর বেশিরভাগও বেতন ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন। এতে বিমানবন্দর নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও প্রভাব পড়ছে। ২০১৮ সালের শাটডাউনের সময় টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ বেতন ছাড়া কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, এবার সেই আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!