ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের উত্তেজনা চায় না। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ভাষার নির্বাচনে সতর্ক থাকতে বলেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নেটওয়ার্ক ১৮ গ্রুপের শীর্ষ সম্পাদক রাহুল জোশির সঙ্গে এক কথোপকথনে রাজনাথ এসব কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং বলেন, “আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চাই না। তবে ইউনূসের উচিত নিজের বিবৃতির শব্দচয়ন নিয়ে সতর্ক থাকা।” তিনি আরও বলেন, “ভারত যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম, কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।”
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্ক শুরু থেকেই ঝাঁকুনিপূর্ণ। সাম্প্রতিক কিছু কূটনৈতিক মূহুর্ত—যেমন ঢাকায় পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের সৌজন্য সাক্ষাৎ—ও ঘটতি এই টানাকে আরও তীব্র করেছে।
নিজের দেশ-বিদেশ সফরের সময় তুরস্কের পার্লামেন্টীয় পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতাকে ‘আর্থ অব ট্রায়াম্ফ’ নামের একটি বই উপহার দেওয়ার ঘটনাটিও আলোচনায় এসেছে। সূত্র অনুযায়ী, ওই সংকলনে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ছবিনির্ভর কোলাজ ও গ্রাফিতিগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। ভারতের নিউজ 18 মাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ওই সংকলনে এমন একটি মানচিত্র রয়েছে যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বের আসাম রাজ্যকে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর অংশ দেখানো হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে মানচিত্রের পাশাপাশিও আসাম দখল বিষয়ক কোনো পরিকল্পনার বিবরণ রয়েছে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে—এমনই সংবাদে বলা হয়।
ইউনুসের কূটনৈতিক কর্মসূচিতে পাকিস্তানি সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক হওয়া এবং তুর্কি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ ও উপহার দেওয়ার ঘটনাগুলোও দুই দেশের কূটনীতিতে সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এসব প্রেক্ষাপটে রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য কূটনৈতিক সতর্কতার ইঙ্গিত বহন করছে—অর্থাৎ প্রতিবেশী দেশকে অপ্রীতিকরভাবে বিবাদে না জড়ানোই ভারতের নীতির মূল লক্ষ্য।
আইনজীবী, কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিবৃতি ও উপস্থাপনায় বছরের সুর গুরুত্ব বহন করে; তাই বিবৃতি প্রদানে আরও সংযমের আহ্বান রাখলে কূটনৈতিক পরিস্থিতি শীতল রাখতে সহায়ক হবে।
উল্লেখ্য, ঘটনাসমূহ ও দাবিগুলো ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকারভিত্তিক—তাই তাদের বক্তব্যের যে অংশগুলো বিবাদ সৃষ্টি করছে সেগুলোতে উভয় পক্ষের প্রতিক্রিয়া ও ব্যাখ্যা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার মতামত লিখুন :