চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে “৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলন – 6th International Conference on Physics for Sustainable Development and Technology (ICPSDT)-2025” সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য গবেষক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল (বুধবার) সকাল ১০টায় চুয়েটের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী এবং চুয়েটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ. এইচ. রাশেদুল হোসেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এইচ. এম. এ. আর. মারুফ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এবং সম্মেলনের সম্পাদক অধ্যাপক ড. অনিমেষ কুমার চক্রবর্তী স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়েট উপাচার্য বলেন, “ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, উন্নত উপকরণ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য যে মৌলিক জ্ঞানের প্রয়োজন — তা পদার্থবিজ্ঞান থেকেই সম্ভব। কোনো জটিল প্রকৌশল সমস্যা পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক জ্ঞান ছাড়া সমাধান করা যায় না। আপনি যদি প্রকৌশল বিদ্যায় উৎকর্ষ চান, তবে পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন অপরিহার্য।” তিনি চুয়েটের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগকে এমন আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানান এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উদ্বোধনী পর্বের শেষে শুরু হয় প্রবন্ধ উপস্থাপন। দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিরা মূল ও আমন্ত্রিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এরপর শুরু হয় কারিগরি প্রবন্ধ উপস্থাপন। চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে নির্বাচিত ২৭৪টি গবেষণা পত্রের মধ্যে প্রায় ২৫০টি তালিকাভুক্ত করা হয়। দিনব্যাপী এসব গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন কার্যক্রম চলে।
সম্মেলনের শেষ দিনে আজ সকালে দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় এবং পরবর্তীতে শুরু হয় পোস্টার উপস্থাপন অনুষ্ঠান। এই সম্মেলনে মোট ১১২টি পোস্টার উপস্থাপন করা হয়। দিনব্যাপী চলে পোস্টার উপস্থাপনা ও মূল্যায়ন কার্যক্রম।
সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, “এ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে আমি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। এটি আমার জীবনের প্রথম কোনো সম্মেলনে অংশগ্রহণ। এখানে এসে আমি নিজের চিন্তাগুলো অন্যদের সামনে উপস্থাপন করতে পারছি, পাশাপাশি অন্যরা কী নিয়ে কাজ করছে তাও জানতে পারছি। সব মিলিয়ে আজকের অনুষ্ঠানটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, “অনেকেই মনে করেন পদার্থবিজ্ঞান কেবল পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য, কিন্তু এর বহুবিধ প্রয়োগমূলক শাখা রয়েছে — যা অনেকেই জানেন না। এই কনফারেন্সে ভালো লেগেছে যে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা নিজেদের কাজে কীভাবে পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহার করছে তা উপস্থাপন করেছে। এর ফলে পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময় এবং বোঝাপড়ার পরিধি বাড়ছে।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহিমা নাসিন বলেন, “আমি মনে করি এটি একটি সফল সম্মেলন। চুয়েট পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে এই চমৎকার কনফারেন্সে অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক অংশগ্রহণ করেছেন। এ ধরনের সম্মেলন আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। এসব কনফারেন্সে গবেষকরা পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগিক দিকগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন, যার মাধ্যমে পারস্পরিক গবেষণার ক্ষেত্র আরও সমৃদ্ধ হয়।”
মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নোমান আর্শিদ বলেন, “এই কনফারেন্সে উপস্থিত হয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি আমার ছাত্রজীবন ও কর্মজীবনে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকের সঙ্গে কাজ করেছি — তারা খুব ভালো করছে। চুয়েট পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহ্বানে এটি আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর। এখানে তরুণ গবেষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে ভালো লাগছে। তারা তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োগিক দিক নিয়েও কাজ করছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই ধরনের কনফারেন্স গবেষণায় নেটওয়ার্ক তৈরি, জ্ঞান আদানপ্রদান ও নতুন ধারণার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
সম্মেলনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এইচ. এম. এ. আর. মারুফ বলেন, “চুয়েট পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে আমাদের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন প্রতি দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সাল থেকে আমরা নিয়মিতভাবে এই কনফারেন্স আয়োজন করে আসছি। প্রতিবারের মতো এবারও দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য গবেষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। সবাই তাদের গবেষণা ও ধারণা বিনিময় করছেন। আমরা সবগুলো প্রবন্ধ সরাসরি উপস্থাপনার ব্যবস্থা করেছি। আশা করি, আমাদের এই কার্যক্রম ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।”
আজ সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় এই দুই দিনব্যাপী কনফারেন্স। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। এ সময় প্রবন্ধ উপস্থাপন ও পোস্টার প্রেজেন্টেশনে সেরাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে পর্দা নামে ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান সম্মেলনের।

 
               
                             
                             
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
                                           
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার মতামত লিখুন :