ঢাকা সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম পড়াশোনার জন্য, এখন সে লাশ হয়ে ফিরেছে—জুবায়েদের বাবা

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫

ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম পড়াশোনার জন্য, এখন সে লাশ হয়ে ফিরেছে—জুবায়েদের বাবা

ছবিঃ সংগৃহীত

“আমার ছেলে জুবায়েদকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলাম একটা ডিগ্রি অর্জনের জন্য, কিন্তু সে এখন আমার বাড়িতে লাশ হয়ে ফিরেছে। আমার স্বপ্ন আজ কবরে শুয়ে আছে।”—আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে এমন কথাই বললেন নিহত জুবায়েদ হোসাইনের বাবা মোবারক হোসাইন।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হাসিবুল ইসলাম এবং শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেন তিনি।
মোবারক হোসাইন বলেন, “আমার একটাই দাবি—আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। এর বাইরে আমার আর কোনো চাওয়া নেই।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, ট্রেজারার অধ্যাপক সাবিনা শরমীন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, জবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরা।

দোয়া মাহফিলে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “আমরা স্বীকার করি, আমাদের সংগঠনে কিছু খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু বেশিরভাগই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। জুবায়েদ ও সাম্যের মতো নেতাকর্মীরা আমাদের গর্ব। তাদের হত্যার ন্যায্য বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” তিনি আরও বলেন, “জুবায়েদ হত্যার সময় স্থানীয়রা ঘটনাটি দেখেও প্রতিবাদ করেনি, অথচ শিক্ষার্থীরা জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদ করেছে—এটাই বাস্তবতা।”

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, “জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের ১৪২ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরেও সাম্য ও জুবায়েদের মতো নেতাকর্মীদের ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। পারভেজ হত্যার পর প্রশাসন দায়িত্বে গড়িমসি করেছিল, এবার যেন তা না হয়।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “হাসিব দেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল। তার স্বপ্ন ছিল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্য পূরণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি জুবায়েদের হত্যারও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে—এটাই তাদের আত্মার প্রতি আমাদের দায়।”

উপাচার্য আরও জানান, “আমরা এই ঘটনার দ্রুত প্রতিকার চাইছি। ইতোমধ্যে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আমরা চাই, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জুবায়েদ ও হাসিবুলের পরিবারের প্রত্যাশা পূরণ হোক—অর্থাৎ ন্যায়বিচার হোক।”

সভা শেষে নিহত দুই শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংগঠনের নেতারা একবাক্যে প্রতিশ্রুতি দেন—এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আমার ক্যাম্পাস

Link copied!