ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ছাত্রসংসদ বিষয়ক উন্মুক্ত আলোচনা সভা। উক্ত আলোচনা সভায় ২৮ অক্টোবরের মধ্যে ছাত্রসংসদ বিষয়ক নীতিমালার খসড়াপ্রদানের ঘোষণা দেন আহ্বায়ক সংশ্লিষ্ট কমিটি।
আজ মঙ্গলবার(১৪ অক্টোবর) দুপুর তিনটায় অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফ হোসেন গ্যালারিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠা বিষয়ক আহ্বায়ক সংশ্লিষ্ট কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রসংসদ বিষয়ে তাদের সুচিন্তিত ভাবনা, সুপারিশ ও মতামত বিনিময় করেন। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: ওমর ফারুক, ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো: রাফিউল হাসান, মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো: আব্দুর রউফ সরকার, এবং ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শফি আহমেদ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা।
উক্ত আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ চাই কিনা,ছাত্রসংসদের গুরুত্ব,ছাত্রসংসদের নীতিমালা কেমন হবে, প্রত্যাশিত ছাত্রসংসদ কেমন হবে, সে বিষয়ে তাদের ভাবনা, সুপারিশ ও মতামত সংগ্রহের লক্ষ্যে আলোচনা করা হয়। উক্ত আলোচনার একপর্যায়ে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে ছাত্রসংসদ বিষয়ক নীতিমালার খসড়াপ্রদানের বিষয়ে আশ্বস্থ করেন ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো: রাফিউল হাসান।
এসময় পরিবেশ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. উসামা বলেন “আমরা দেখেছি, শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত ছাত্রসংসদ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা ধরনের হয়রানি ও অনিয়ম দেখা দিয়েছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ব্যানারে ছাত্রসংসদ গঠন করতে। যদি এখানে ছাত্রদের দ্বারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, তাহলে পরবর্তীতে কোনো দলীয় ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। ছাত্রসংসদ থাকলে তারা শিক্ষক ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারবে। ছাত্রদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারবে, ফলে প্রশাসনের কাজও অনেক সহজ হবে। আমরা চাই, আসন্ন ডিসেম্বরের মধ্যেই যেন ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।”
বায়োমেডিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্স অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী মোঃ নাঈমুজ্জামান বলেন, ছাত্রসংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে পারেন। প্রেসিডেন্ট অবশ্যই শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হতে হবে এবং ছাত্রসংসদ কোনোভাবেই শিক্ষকদের অধীনে না থেকে সরাসরি রিজেন্ট বোর্ডের আওতাধীন থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে ছাত্রসংসদ সদস্যরা রিজেন্ট বোর্ডের বিশেষ সভায় অংশ নেবে, যেখানে শুধুমাত্র বোর্ড সদস্য ও নির্বাচিত ছাত্রপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। ছাত্রসংসদ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক থাকবে। শিক্ষার্থীদের জন্য যে ফান্ড থাকে, ব্যয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ছাত্রসংসদের প্রতিনিধিদের মতামত বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি, ছাত্রপ্রতিনিধিদের সকল সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত ক্লাবগুলোর প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারিদেরও নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যাতে সবার অংশগ্রহণ থাকে। আমরা চাই একটি আধুনিক, জবাবদিহিমূলক ও আন্তর্জাতিক মানের ছাত্রসংসদ— যেমন অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে— যেখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নেতৃত্ব পরিবর্তন বাধ্যতামূলক হবে এবং কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না।
আপনার মতামত লিখুন :