আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছে বিএনপি। আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলটি। ইতোমধ্যে ১৭৭ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন, বিএনপি বর্তমানে শরিক দল ও সমমনা জোটের আসন বণ্টন নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীদের দ্রুত মাঠে নামানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
বিভাগভিত্তিক প্রার্থী বাছাই
সূত্র জানায়, বিএনপি দেশকে নয়টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রার্থী যাচাই-বাছাই করছে। দেশের আটটি বিভাগ ছাড়াও কুমিল্লাকে আলাদা অঞ্চল হিসেবে ধরা হয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বে আছেন পাঁচজন শীর্ষ নেতা—
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (ঢাকা ও চট্টগ্রাম),
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (সিলেট ও খুলনা),
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান (রাজশাহী ও রংপুর),
অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (কুমিল্লা ও বরিশাল),
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ (ময়মনসিংহ)।
এই নেতারা স্থানীয় পর্যায়ের তথ্য ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন। তা স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার পর সংশোধন ও সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। সর্বশেষ অনুমোদন দেবেন তারেক রহমান।
প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পাওয়া ১৭৭ প্রার্থী
ইতোমধ্যে ১৭৭ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়নের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন—
শামসুজ্জামান দুদু (চুয়াডাঙ্গা-১), আজিজুল বারী হেলাল (খুলনা-৪), হাফিজ ইব্রাহীম (ভোলা-২), শিমুল বিশ্বাস (পাবনা-৫), জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২) এবং মফিজুর রহমান আশিক (চট্টগ্রাম-১৬)।
দলের তরুণ নেতারাও সক্রিয়ভাবে মাঠে নামছেন। কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, লন্ডন থেকে তারেক রহমান সরাসরি ফোন করে মাঠে কাজ জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন।
শরিক দলগুলোর জন্য ৫০ আসন
জোটের শরিকদের জন্য বিএনপি সর্বোচ্চ ৫০টি আসন ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি আসনে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়তে পারেন।
এছাড়া অন্যান্য শরিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন—
আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪), জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২), নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩) এবং সাইফুল হক (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি)।
ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার নির্দেশ
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“অনেক এলাকায় প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। সবাইকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, যেন মনোনয়ন না পাওয়া কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী না হন। একক প্রার্থীকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন জানান, “নির্বাচনী সমীকরণ এখনও পরিবর্তনশীল। নতুন উপাদান যুক্ত হচ্ছে। তাই সব কিছু স্পষ্ট হতে আরও কিছু সময় লাগবে।”
নভেম্বরের শুরুতেই চূড়ান্ত তালিকা
দলীয় সূত্র জানায়, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই একক প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর থেকেই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সারাদেশে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবে বিএনপি।
আপনার মতামত লিখুন :