জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন ছিল ১১ সেপ্টেম্বর। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পর এই নির্বাচন ভীষণ আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। কিন্তু বাস্তবে নির্বাচনটি একদিকে যেমন ছিল ত্রুটিপূর্ণ, তেমনই বিতর্কিত। অব্যবস্থাপনায় ভরা নির্বাচনটির এই প্রক্রিয়ায় মাশুল গুনতে হয়েছে আমাদের একজন তরুণ শিক্ষককে তার জীবন দিয়ে। নির্বাচন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই এর অদক্ষতা, লোকবল বাড়াতে অনীহা, সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব, প্রার্থী বিশেষের প্রতি বিরূপতা ইত্যাদি বিবেচনা করলে সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর পটভূমিতে মারাত্মক অদক্ষতার একটা পরিবেশ আমরা দেখতে পাই। মরহুম জান্নাতুল ফেরদৌসের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে অদূরদর্শী কর্মপরিকল্পনারহিত নির্বাচন কমিশনের নিন্দা করি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ অব্দি যে গুরুতর সমস্যাগুলো দৃশ্যমান হয়েছে, সেগুলো হলো ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট। একজন ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে অনিয়মিত ছাত্র হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনের ৪ দিন আগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়, ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে যাওয়ার পর ডোপ টেস্টের প্রাসঙ্গিকতা জানতে চাইলে বলা হয় ব্যালট পেপার ছাপানো হয়নি, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট রাখতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের আগের রাত ২.৩০ মিনিটে পোলিং এজেন্ট রাখা যাবে বলে ঘোষণা দেয়, ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া এবং ছাত্রীদের হল পরিদর্শনে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া,নির্ধারিত ভোটারের চাইতে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ করার ঘটনা বড় রকমের সংশয় তৈরি, অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার ঘটনাও ভোট কারচুপির সুযোগ সৃষ্টি, ভোটার তালিকায় নাম না থাকায়, বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভোট দিতে পারেনি। জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়া, কোন কোন হলের একাধিক প্রার্থীর নাম ছাপা না হওয়া বা কয়জন সদস্যকে ভোট দিতে হবে সেই নির্দেশনায় ভুল অংক লেখা, নির্ধারিত সময়ে সকল হলে ভোট প্রদান শেষ না হওয়া ও নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘন্টা পরেও ভোট গ্রহণ চলতে থাকা, ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনায় প্রশ্ন উঠায়, হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্তের পর বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ না করা, নির্বাচনে নানান দায়িত্বে থাকা ৩জন সহকর্মী নির্বাচনের অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ ও অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া, একইভাবে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর এইসব অভিযোগ তুলে অংশগ্রহণকারী ৮টি প্যানেলের মধ্যে ৫টি প্যানেল এই নির্বাচন বর্জন করা, ক্যাম্পাসে সকল খাবার দোকান ও চা এর দোকান বন্ধ রেখে ক্যাম্পাসের উৎসবমুখর পরিবেশকে দমবন্ধ দশায় পরিণত করা অন্যদিকে নির্বাচনের দিন দুপুরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গেইটে জড়ো হওয়া, সর্বশেষ ৫ জনের নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ২জন নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করা।’
এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যেকোনো প্রকারে একটি দলকে জিতিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সমস্ত মনোযোগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থী, রিটার্নিং অফিসার এবং নির্বাচন কমিশনারদের বর্জন, পদত্যাগ ও সমস্ত অভিযোগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। উল্লেখিত কারণগুলো থেকে এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনটি পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে এবং গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। একই কারণে আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করি এবং মনে করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এইসব কারসাজি উন্মোচন হওয়া জরুরি,’ বলা হয় বিবৃতিতে।

আপনার মতামত লিখুন :