যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাকের বাজারে দীর্ঘদিনের শীর্ষ রপ্তানিকারক চীন ক্রমেই অবস্থান হারাচ্ছে। গত এক দশকে দেশটির রপ্তানি আয়, রপ্তানির পরিমাণ ও ইউনিটপ্রতি মূল্য সব ক্ষেত্রেই পতন ঘটেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে এবং নতুন করে বাজার দখল করছে।
মার্কিন নতুন শুল্কনীতিতে চীন বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনা পোশাকের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রায় ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পোশাকে শুল্ক মাত্র ২০ শতাংশ, এমনকি মার্কিন কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধাও পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চীনের রপ্তানি মূল্য প্রায় ৪৬ শতাংশ কমেছে। ২০১৫ সালে দেশটির রপ্তানি ছিল ৩০৫.৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছর নেমে এসেছে ১৬৫.১ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫.৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলারে, যা ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। পরিমাণগত দিক থেকেও চীনের রপ্তানি কমে গেছে ১,১৩৮ মিটার থেকে ৯২৯ মিটারে, যেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ১৮৭ মিটার থেকে ২৩৭ মিটারে।
ইউনিটপ্রতি মূল্যের দিক থেকেও চীনের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। গত এক দশকে দেশটির গড় ইউনিটপ্রতি দর ৩৪ শতাংশ কমে ২ ডলার ৬৮ সেন্ট থেকে ১ ডলার ৭৮ সেন্টে নেমেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ কিছুটা উন্নতি করেছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পোশাকের গড় ইউনিটপ্রতি দর ছিল ২ ডলার ৮৯ সেন্ট, যা বেড়ে ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ৩ ডলার ১০ সেন্টে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধ শুরু হয়। তখন থেকেই চীনের রপ্তানি কমতে থাকে এবং আগামীতে আরও কমবে। সেখানে বাংলাদেশ বাজার দখলে আরও ভালো করবে। তবে তিনি মনে করেন, কেবল রপ্তানির ভলিউম বাড়ালেই হবে না, মূল্য সংযোজিত পণ্যে নজর বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেশি পরিমাণে রপ্তানি করেও কম দাম পাচ্ছে, অথচ ভিয়েতনামের মতো দেশ তুলনামূলক কম রপ্তানি করেও বেশি দাম আদায় করতে সক্ষম।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন এখনও বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি রপ্তানি করছে। তবে প্রবণতা বলছে, আগামী দিনে এই ব্যবধান দ্রুতই কমে আসবে। বাংলাদেশের জন্য এটি বড় সুযোগ হলেও, মূল্য সংযোজন ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :