এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে সোয়া চার লাখেরও বেশি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জমা পড়েছে। ফলাফলে অসন্তুষ্ট ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ পরীক্ষার্থী মোট ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৮টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন। শিক্ষা বোর্ডগুলো জানিয়েছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আগামী ১৬ নভেম্বরের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফল দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসাবেই আমরা ১৬ নভেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
গত ১৬ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ১৭ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে শিক্ষার্থীরা আবেদন করার সুযোগ পান।
বিশেষজ্ঞরা জানান, খাতা পুনঃনিরীক্ষণ মানে খাতা নতুন করে মূল্যায়ন করা নয়। বরং খাতায় প্রশ্নভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বরগুলো সঠিকভাবে যোগ হয়েছে কি না, তা পুনরায় যাচাই করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুল যোগ বা নম্বর স্থানান্তরের ত্রুটিই এখানে সংশোধনের মূল লক্ষ্য।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারও সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে—৬৬ হাজার ১৫০ শিক্ষার্থী মোট ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৬টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন। কুমিল্লা বোর্ডে আবেদন করেছেন ২২ হাজার ৫০৩ পরীক্ষার্থী, তাদের পুনঃনিরীক্ষণের খাতা ৪২ হাজার ৪৪টি। রাজশাহী বোর্ডে ২০ হাজার ৯২৪ জন শিক্ষার্থীর ৩৬ হাজার ১০২টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য গৃহীত হয়েছে।
যশোর বোর্ডে আবেদন করেছেন ২০ হাজার ৩৯৫ শিক্ষার্থী, তাদের খাতা সংখ্যা ৩৬ হাজার ২০৫টি। চট্টগ্রাম বোর্ডে আবেদন জমা পড়েছে ২২ হাজার ৫৯৫ জনের, মোট খাতা ৪৬ হাজার ১৪৮টি। সিলেট বোর্ডে ১৩ হাজার ৪৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন ২৩ হাজার ৮২টি খাতার পুনঃনিরীক্ষণের জন্য।
বরিশাল বোর্ডে আবেদন করেছেন ৮ হাজার ১১ জন পরীক্ষার্থী, মোট খাতা ১৭ হাজার ৪৮৯টি। দিনাজপুর বোর্ডে ১৭ হাজার ৩১৮ শিক্ষার্থীর ২৯ হাজার ২৯৭টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আওতায় এসেছে। ময়মনসিংহ বোর্ডে ১৫ হাজার ৫৯৮ জন শিক্ষার্থী ৩০ হাজার ৭৩৬টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছেন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১২ হাজার ৭ জন পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ৩৭৮টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে, সর্বনিম্ন আবেদন এসেছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে—৭ হাজার ৯১৬ শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ৭৩৩টি খাতা পুনরায় যাচাইয়ের জন্য আবেদন করেছেন।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আবেদন যাচাই ও খাতা পুনঃনিরীক্ষণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশের লক্ষ্যে বোর্ডগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদদের মতে, ক্রমবর্ধমান পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন সংখ্যা একদিকে পরীক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে সচেতনতার ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে মূল্যায়ন ব্যবস্থার নির্ভুলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাও স্মরণ করিয়ে দেয়। তারা মনে করেন, স্বচ্ছতা ও আস্থার ভিত্তিতে এই প্রক্রিয়াটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও ন্যায়বোধকে শক্তিশালী করছে—যা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক দিক নির্দেশনা।

আপনার মতামত লিখুন :